ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রদ্ধা ভালবাসায় শাহজাদপুরে সাংবাদিক শিমুলের দাফন সম্পন্ন

জাতীয় ডেস্কঃ

দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলকে শেষবারের মত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিদায় জানালো সর্বস্তরের মানুষ।

শনিবার  সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় কয়েক হাজার স্বতঃফুর্ত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।

শিমুল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে নিহত হয়। শিমুল আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শাহজাদপুরে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে আহত হয়ে মারা যান।

এ হত্যাকাণ্ড ও শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মেয়রের ভাইদের হাতে গুরুতর আহতের প্রতিবাদে শনিবার উপজেলা ছাত্রলীগের ডাকা অর্ধ দিবস হরতাল স্বতঃফুর্তভাবে পালিত হয়েছে। এদিকে এসব ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় থানা পুলিশ হালিমুল হক মিরুর ২ ভাই সহ ৭ জনকে আটক করেছে।

জানা যায়, ঠিকাদারী কাজ না করায় শাহজাদপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদ প্রতিবাদ করলে মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই পিন্টু লোকজন নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বেদম মারধর করে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে মনিরামপুর এলাকায় অবস্থিত পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু’র বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় মেয়রের সমর্থকরা তাদের ওপরে হামলা চালালে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে।এক পর্যায়ে মেয়র মিরু গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মাথায় ও মুখে গুলি লাগে।

তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করা। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে শুক্রবার দুপরে ঢাকায় নেবার পথে তিনি মারা যান। এজন্য উপজেলা ছাত্রলীগ আধাবেলা হরতাল আহবান করে প্রচারনা চালায়। শনিবার সকাল ৮টা হতে শুরু ১২টা পর্যন্ত চলা এ হরতাল স্বতঃফুর্ত শান্তিপুর্র্ন ভাবে পালিত হয়।

হরতালকে সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক সমাজও সমর্থন দেয়। হরতালের ফলে উপজেলা শহরের অধিকাংশ দোকান-পাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। হরতালের সমর্থনে শহরের মোড়ে-মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালীয়ে দোষীদের আটকের দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে শিমুলের গ্রাম মাদলাবাসী। সাংবাদিকরাও একইভাবে কর্মসুচি পালন করে। তবে পাবনার নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়ক হরতালের আওতামুক্ত থাকায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ গামী সকল যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

এদিকে গুলিতে নিহত সাংবাদিক শিমুলের নানী মাদলা রোকেয়া বেগম (৯০) শোকে বিহবল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুজনের লাশের জানাজা রোববার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় শাহজাদপুর পাইলট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে তার বিদেহী আত্তার মাগফিরাত কামনা ও দোষীদের আটক করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলে স্থানীয় সাংসদ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন, সাবেক এমপি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আজাদ রহমান, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনর রশিদ খান হাসান, সাধারন সম্পাদক ফজলে খোদা লিটন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল দাস, প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ অংশ গ্রহন করে। এরপর দুপুর পৌনে একটার দিকে নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

জানাজায় অংশ নেয়া সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পৌর মেয়র তার ব্যবহৃত শর্টগান বের করে গুলি ছুঁড়তে উদ্যত হন। তখন আমরা বারবার নিষেধ করি। কিন্তু তিনি শোনেননি আমাদের কথা। তার গুলিতেই সংবাদ সংগ্রহে থাকা সাংবাদিক শিমুল আহত হয়ে মারা গেছেন। আমরা গুলির খোসা সহ শর্টগানটি উদ্ধার করেছি। তবে মিরু পালিয়ে যাওয়ায় আমরা তাকে আটক করতে পারিনি।
পুলিশের সহযোগীতায় মেয়র পালিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন সাংবাদিকদের জানান, এর আগেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ২ দফা বহিস্কার হয়েছিল মেয়র মিরু। শাহজাদপুরে শান্তিপুর্ন মানুষের বসবাস। সে সহ তার দুই ভাই এলাকার অস্ত্র উচিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবার আর তার কোন ছাড় নেই। স্বতঃফুর্ত জনতার একই দাবি তাকে দল থেকে বহিস্কার ও শাস্তি।

উপস্থিত সাবেক এমপি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, অতীতে অনেক অন্যায় করলেও দল তার আকুতিতে ক্ষমা করে দলে স্থান দিয়েছে। তবে এক সময়ের চরমপন্থি দলের নেতা মিরুকে আর কোনভাবে ছাড় দেয় হবে না। বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক পর্যবেক্ষন করছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত শিমুলের স্ত্রী সহ ২টি শিশু সন্তান রয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

শ্রদ্ধা ভালবাসায় শাহজাদপুরে সাংবাদিক শিমুলের দাফন সম্পন্ন

আপডেট সময় ০১:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ

দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলকে শেষবারের মত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিদায় জানালো সর্বস্তরের মানুষ।

শনিবার  সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় কয়েক হাজার স্বতঃফুর্ত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।

শিমুল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে নিহত হয়। শিমুল আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শাহজাদপুরে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে আহত হয়ে মারা যান।

এ হত্যাকাণ্ড ও শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মেয়রের ভাইদের হাতে গুরুতর আহতের প্রতিবাদে শনিবার উপজেলা ছাত্রলীগের ডাকা অর্ধ দিবস হরতাল স্বতঃফুর্তভাবে পালিত হয়েছে। এদিকে এসব ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় থানা পুলিশ হালিমুল হক মিরুর ২ ভাই সহ ৭ জনকে আটক করেছে।

জানা যায়, ঠিকাদারী কাজ না করায় শাহজাদপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদ প্রতিবাদ করলে মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই পিন্টু লোকজন নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বেদম মারধর করে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে মনিরামপুর এলাকায় অবস্থিত পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু’র বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় মেয়রের সমর্থকরা তাদের ওপরে হামলা চালালে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে।এক পর্যায়ে মেয়র মিরু গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মাথায় ও মুখে গুলি লাগে।

তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করা। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে শুক্রবার দুপরে ঢাকায় নেবার পথে তিনি মারা যান। এজন্য উপজেলা ছাত্রলীগ আধাবেলা হরতাল আহবান করে প্রচারনা চালায়। শনিবার সকাল ৮টা হতে শুরু ১২টা পর্যন্ত চলা এ হরতাল স্বতঃফুর্ত শান্তিপুর্র্ন ভাবে পালিত হয়।

হরতালকে সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক সমাজও সমর্থন দেয়। হরতালের ফলে উপজেলা শহরের অধিকাংশ দোকান-পাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। হরতালের সমর্থনে শহরের মোড়ে-মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালীয়ে দোষীদের আটকের দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে শিমুলের গ্রাম মাদলাবাসী। সাংবাদিকরাও একইভাবে কর্মসুচি পালন করে। তবে পাবনার নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়ক হরতালের আওতামুক্ত থাকায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ গামী সকল যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

এদিকে গুলিতে নিহত সাংবাদিক শিমুলের নানী মাদলা রোকেয়া বেগম (৯০) শোকে বিহবল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুজনের লাশের জানাজা রোববার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় শাহজাদপুর পাইলট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে তার বিদেহী আত্তার মাগফিরাত কামনা ও দোষীদের আটক করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলে স্থানীয় সাংসদ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন, সাবেক এমপি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আজাদ রহমান, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনর রশিদ খান হাসান, সাধারন সম্পাদক ফজলে খোদা লিটন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল দাস, প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ অংশ গ্রহন করে। এরপর দুপুর পৌনে একটার দিকে নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

জানাজায় অংশ নেয়া সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পৌর মেয়র তার ব্যবহৃত শর্টগান বের করে গুলি ছুঁড়তে উদ্যত হন। তখন আমরা বারবার নিষেধ করি। কিন্তু তিনি শোনেননি আমাদের কথা। তার গুলিতেই সংবাদ সংগ্রহে থাকা সাংবাদিক শিমুল আহত হয়ে মারা গেছেন। আমরা গুলির খোসা সহ শর্টগানটি উদ্ধার করেছি। তবে মিরু পালিয়ে যাওয়ায় আমরা তাকে আটক করতে পারিনি।
পুলিশের সহযোগীতায় মেয়র পালিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন সাংবাদিকদের জানান, এর আগেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ২ দফা বহিস্কার হয়েছিল মেয়র মিরু। শাহজাদপুরে শান্তিপুর্ন মানুষের বসবাস। সে সহ তার দুই ভাই এলাকার অস্ত্র উচিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবার আর তার কোন ছাড় নেই। স্বতঃফুর্ত জনতার একই দাবি তাকে দল থেকে বহিস্কার ও শাস্তি।

উপস্থিত সাবেক এমপি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, অতীতে অনেক অন্যায় করলেও দল তার আকুতিতে ক্ষমা করে দলে স্থান দিয়েছে। তবে এক সময়ের চরমপন্থি দলের নেতা মিরুকে আর কোনভাবে ছাড় দেয় হবে না। বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক পর্যবেক্ষন করছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত শিমুলের স্ত্রী সহ ২টি শিশু সন্তান রয়েছে।