ঢাকা ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরেও শ্রীকাইল কলেজ জাতীয় করন না হওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী, নান্দিক সৌন্দর্যের শান্তির নিকেতন ও প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হিসেবে এশিয়া মহাদেশে পরিচিত শ্রীকাইল কলেজ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিগ্রি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে কলেজটি। অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য মন্ডিত কলেজটি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে ব্যাপক অবদান রাখার পরও প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় করনের মূখ দেখেনি। প্রতি বছরই উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এ কলেজটি। বিভিন্ন সময়ে এ দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা এ কলেজটিকে ঘিরে অনার্স কোর্স চালুসহ

সরকারিকরনের দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যত বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ অঞ্চলের জনমনে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজ ও মধ্যমিক পর্যায়ে একটি বিদ্যালয় জাতীয় করনের ঘোষনায় এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। পূর্বে মুরাদনগর উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করন না হওয়ায় এবার শ্রীকাইল কলেজ অচিরেই জাতীয় করনের আওতায় আসবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নবীনগর, বাঞ্চারামপুর, দেবীদ্বার ও কসবা উপজেলার ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা সুবিধার্থে স্বয়ংসর্ম্পূন একমাত্র আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৪১ সালে প্রথম বিশ্ব যোদ্ধের সৈনিক ও ওই এলাকার বাসিন্দা স্বর্গীয় ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত করার প্রযোজনীয়তা অনুভব করে তৎকালীন সময়ে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল বিশিষ্ট শ্রীকাইল কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ত্যাগী এবং চির কুমার সৈনিক কলেজটির নামে উৎসর্গ করে গেছেন প্রায় ৩০ একর সম্পত্তি, এর মধ্যে ১৪ একর ২৮ শতকের মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাস ভবনটি। আছে সুপরিসর ২১টি কক্ষ বিশিষ্ট তিনতলা একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষের রয়েছে তিনতলা আবাসিক ভবন, ৩৭টি শিক্ষক পরিবার বসবাসের উপযোগী আবাসিক ভবন, ৮০ জন ছাত্র ও ৪০জন ছাত্রী  থাকার ২০ কক্ষ বিশিষ্ট পৃথক দ্বি’তলা আবাসিক ভবন,  ১০টি বিষয়ে গবেষনাগার, ৯ টি পুকুর, ১ টি বিশাল খেলার মাঠ, সুবিশাল অডিটোরিয়াম, মাল্টিমিডিয়া ল্যাব, বিএনসিসি, স্কাউট কক্ষ, সোনালী ব্যাংক, পোষ্ট অফিস, কারুকার্য ও নকশাখচিত নজরকাড়া জামে মসজিদ রয়ছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এ কলেজে সফরকালে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৯৯৮ ও ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারনায় এসেও কলেজটিকে সরকারিকরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও অজ্ঞাত কারনে এ পর্যন্ত প্রাচীন এ কলেজটি আদৌ সরকারিকরন করা হয়নি। এছাড়া ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর অব: জিয়াউর রহমান, ১৯৮৪ সালে উপ-রাষ্ট্রপতি নূরুল ইসলাম ও ফাস্ট লেডি বেগম রৌশন এরশাদ পরিদর্শনে এসেছিলেন। কিন্তু এ যাবত আর কলেজটি সরকারি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। এ নিয়ে এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিয়া গোলাম সারোয়ার জতীয়কর না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান,  পূর্বে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এবারো না হওয়াতে বেদনায় নীল হয়ে গেলাম। তবে কি শ্রীকাইল কলেজের সরকারী মুকুট রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসের অমিতের মত “সোনার রঙের দিগন্ত রেখা” ধরা দিয়েই আছে তবু কিছুতেই ধরা দেবে না- এ প্রশ্ন এখন মুরাদনগরবাসীর।

ট্যাগস

মুরাদনগর বার্তায় সংবাদ প্রকাশের পর মুরাদনগরে আর্সি নদীতে নির্মাণ করা বাঁধ অপসারন

প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরেও শ্রীকাইল কলেজ জাতীয় করন না হওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ

আপডেট সময় ০৪:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী, নান্দিক সৌন্দর্যের শান্তির নিকেতন ও প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হিসেবে এশিয়া মহাদেশে পরিচিত শ্রীকাইল কলেজ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিগ্রি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে কলেজটি। অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য মন্ডিত কলেজটি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে ব্যাপক অবদান রাখার পরও প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় করনের মূখ দেখেনি। প্রতি বছরই উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এ কলেজটি। বিভিন্ন সময়ে এ দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা এ কলেজটিকে ঘিরে অনার্স কোর্স চালুসহ

সরকারিকরনের দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যত বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ অঞ্চলের জনমনে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজ ও মধ্যমিক পর্যায়ে একটি বিদ্যালয় জাতীয় করনের ঘোষনায় এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। পূর্বে মুরাদনগর উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করন না হওয়ায় এবার শ্রীকাইল কলেজ অচিরেই জাতীয় করনের আওতায় আসবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নবীনগর, বাঞ্চারামপুর, দেবীদ্বার ও কসবা উপজেলার ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা সুবিধার্থে স্বয়ংসর্ম্পূন একমাত্র আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৪১ সালে প্রথম বিশ্ব যোদ্ধের সৈনিক ও ওই এলাকার বাসিন্দা স্বর্গীয় ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত করার প্রযোজনীয়তা অনুভব করে তৎকালীন সময়ে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল বিশিষ্ট শ্রীকাইল কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ত্যাগী এবং চির কুমার সৈনিক কলেজটির নামে উৎসর্গ করে গেছেন প্রায় ৩০ একর সম্পত্তি, এর মধ্যে ১৪ একর ২৮ শতকের মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাস ভবনটি। আছে সুপরিসর ২১টি কক্ষ বিশিষ্ট তিনতলা একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষের রয়েছে তিনতলা আবাসিক ভবন, ৩৭টি শিক্ষক পরিবার বসবাসের উপযোগী আবাসিক ভবন, ৮০ জন ছাত্র ও ৪০জন ছাত্রী  থাকার ২০ কক্ষ বিশিষ্ট পৃথক দ্বি’তলা আবাসিক ভবন,  ১০টি বিষয়ে গবেষনাগার, ৯ টি পুকুর, ১ টি বিশাল খেলার মাঠ, সুবিশাল অডিটোরিয়াম, মাল্টিমিডিয়া ল্যাব, বিএনসিসি, স্কাউট কক্ষ, সোনালী ব্যাংক, পোষ্ট অফিস, কারুকার্য ও নকশাখচিত নজরকাড়া জামে মসজিদ রয়ছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এ কলেজে সফরকালে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৯৯৮ ও ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারনায় এসেও কলেজটিকে সরকারিকরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও অজ্ঞাত কারনে এ পর্যন্ত প্রাচীন এ কলেজটি আদৌ সরকারিকরন করা হয়নি। এছাড়া ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর অব: জিয়াউর রহমান, ১৯৮৪ সালে উপ-রাষ্ট্রপতি নূরুল ইসলাম ও ফাস্ট লেডি বেগম রৌশন এরশাদ পরিদর্শনে এসেছিলেন। কিন্তু এ যাবত আর কলেজটি সরকারি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। এ নিয়ে এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিয়া গোলাম সারোয়ার জতীয়কর না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান,  পূর্বে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এবারো না হওয়াতে বেদনায় নীল হয়ে গেলাম। তবে কি শ্রীকাইল কলেজের সরকারী মুকুট রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসের অমিতের মত “সোনার রঙের দিগন্ত রেখা” ধরা দিয়েই আছে তবু কিছুতেই ধরা দেবে না- এ প্রশ্ন এখন মুরাদনগরবাসীর।