তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
কম্পিউটারের অন্যতম মূল একটি অংশ হলো স্টোরেজ। চলতি শতকের শুরুর দিকেও মাত্র কয়েক গিগাবাইটের স্টোরেজই ছিল মূল ধারার স্টোরেজ। এমনকি এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ের জন্যও স্টোরেজের এই সীমাবদ্ধতা ছিল। সেখান থেকে দ্রুত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের প্রসারে আরও অনেক বেশি স্টোরেজের হার্ডডিস্কের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই প্রয়োজনীয়তা পূরণে দ্রুত এগিয়েও আসে হার্ডডিস্ক নির্মাতারা। প্রচলিত হার্ডডিস্কের সাথে সাথে সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি), ফ্ল্যাশ স্টোরেজ এসে এখন সীমাহীন স্টোরজেও নিত্যসঙ্গী করে তুলেছে। আসছে কয়েক বছরের মধ্যে এই স্টোরেজ পৌঁছে যাবে নতুন মাত্রায়। স্টোরেজ নিয়ে চলমান গবেষণায় আসছে দিনগুলোতে কেমন স্টোরেজের দেখা মিলবে, সেটাই তুলে ধরা হলো এই লেখায়।
হার্ডডিস্ক
গত কয়েক বছরে হার্ডডিস্কের স্টোরেজ যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে হার্ডডিস্কের খরচ। এর মধ্যে মূলধারার কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্যই গত বছরের শুরুর দিকে ৬ টেরাবাইট স্টোরেজের হার্ডডিস্ক তৈরি করেছে সিগেট। শুধু তাই নয়, সিঙ্গেলড ম্যাগনেটিক রেকর্ডিং (এসএমআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে ৮ টেরাবাইটের হার্ডডিস্কও বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হার্ডডিস্কে তথ্যের ঘনত্ব অনেকটাই বাড়বে। এই প্রযুক্তির হার্ডডিস্ক উত্পাদনে সাফল্য মিললে টু-ডাইমেনশনাল ম্যাগনেটিক রেকর্ডিং (টিডিএমআর) সিগন্যাল প্রসেসিং প্রযুক্তির দেখাও মিলবে। তাতে করে আরও কম জায়গায় অনেক বেশি স্টোরেজ রাখার সুযোগ উন্মুক্ত হবে।
হার্ডডিস্কের ক্ষেত্রে আরও একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো হিট-অ্যাসিস্টেড ম্যাগনেটিক রেকর্ডিং (এইচএমআর) প্রযুক্তির ব্যবহার। ২০১৭ সালে এই প্রযুক্তির হার্ডডিস্ক বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছিল রয়েছে সিগেটের। এর সাথে হিটাচি তাদের হার্ডডিস্কে বাতাসের পরিবর্তে ব্যবহার করেছে হিলিয়াম গ্যাস। এতে হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারগুলোর মধ্যেকার দূরত্ব কমে এসেছে এবং আরও কম পুরুত্বের হার্ডডিস্ক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আসছে দিনগুলোতেও আলোচ্য প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার আরও বেশি স্টোরেজের ব্যয়সাশ্রয়ী হার্ডডিস্ক বাজারে নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখবে।
ফ্ল্যাশ
হার্ডডিস্কের সাথে সাথে ফ্ল্যাশ ড্রাইভেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। ২০০০ সালের আশেপাশের সময়ে ১২৮ মেগাবাইট বা ২৫৬ মেগাবাইটের ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বা পেনড্রাইভ মূলধারায় থাকলেও মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন ফ্ল্যাশ ড্রাইভে যুক্ত হয়েছে ১২৮ গিগাবাইট বা ২৫৬ গিগাবাইটের মতো স্টোরেজ। আসছে দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং আরও বেশি বেশি স্টোরেজের ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বাজারে আসবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি গবেষকরা। এর মধ্যে ইন্টেল কাজ শুরু করেছে মাইক্রনের সাথে। তারা ৩২-ডিপ থ্রিডি এনএএনডির সাথে মাল্টি-লেভেল সেলের (এমএলসি) সমন্বয়ে প্রতিটি ডাইয়ে ৪৮ গিগাবাইট স্টোরেজ তৈরির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এতে প্রতি ট্রানজিস্টরে এখনকার সর্বোচ্চ পরিমাণের তুলনায় দ্বিগুণ স্টোরেজ ধারণ করানো সম্ভব হবে। ফলে মোবাইল ফর্ম ফ্যাক্টরেই ১ টেরাবাইট স্টোরেজের ফ্ল্যাশ ড্রাইভ তৈরি করা সম্ভব হবে এবং এর দামও হবে প্রচলিত হার্ডডিস্কের তুলনায় অনেক কম। ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী ১০ টেরাবাইটের এসএসডিও বাজারে এসেছে। এমএলসি প্রযুক্তির ব্যবহার যেখানে ফ্ল্যাশ ড্রাইভের স্টোরেজ দ্বিগুণ করে দিতে পারে, সেখানে ট্রিপল-লেভেল সেল (টিএলসি) প্রযুক্তির ব্যবহার এই স্টোরেজে আরও গতি নিয়ে আসতে পারে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও থাকলেও এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী স্টোরেজ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরে এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে বড় ধরনের অগ্রগতির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা।
এন্টারপ্রাইজ স্টোরেজ
গতি আর পরিমাণে ক্রমবর্ধমান ধারা এন্টারপ্রাইজ স্টোরেজের মূল বিষয়। এক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরে এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে মূলত প্রচলিত হার্ডডিস্ক আর ফ্ল্যাশ স্টোরেজের একটি মিশ্র ব্যবহার থাকবে। এর কারণ হলো হার্ডডিস্কে গতি বাড়তে থাকলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত তা ফ্ল্যাশ ড্রাইভের গতিতে স্পর্শ করতে পারবে না। আবার ফ্ল্যাশ ড্রাইভের স্টোরেজ বাড়তে থাকলেও অন্তত আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা প্রচলিত হার্ডডিস্কের সমান্তরালে আসবে না। ফলে হার্ডডিস্ক আর ফ্ল্যাশ ড্রাইভের হাইব্রিডই এন্টারপ্রাইজ স্টোরেজের ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে কাজ করবে। বাল্ক স্টোরেজের ক্ষেত্রেও একইরকমভাবে নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ বা স্টোরেজ অ্যাটাচড নেটওয়ার্কের ব্যবহার থাকবে। এদিকে শীর্ষস্থানীয় সব হার্ডডিস্ক নির্মাতারা এখন এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ের হার্ডডিস্ক তৈরিতে আরও বেশি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ চলতি বছরেও আরও বেশি গতিশীল এবং ব্যয়সাশ্রয়ী এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ের হার্ডডিস্কের দেখা মিলবে বলে জানিয়েছে হার্ডডিস্ক নির্মাতারা। বিশেষ করে সিগেট এবং হিটাচি এ বছরেই এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী নতুন হার্ডডিস্ক বাজারে আনবে বলে জানিয়ে রেখেছে।
ক্লাউড স্টোরেজ
পিসি স্টোরেজ ডিভাইসের মধ্যে ক্লাউড স্টোরেজ না পড়লেও স্টোরেজের আলোচনা ক্লাউড স্টোরেজ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তো বটেই, এন্টারপ্রাইজ পর্যায়েও ক্লাউড স্টোরেজের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে। তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও ক্লাউড স্টোরেজের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাতে করে সামনের দিনে স্টোরেজ ডিভাইসের বদলে ক্লাউড স্টোরেজ একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে বলেই মনে করেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
ভবিষ্যতের স্টোরেজ
- স্টোরেজের ক্ষেত্রে নিকট ভবিষ্যতেই বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখেন না প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। প্রচলিত হার্ডডিস্ক, সলিড স্টেট ড্রাইভ আর ফ্ল্যাশ ড্রাইভের বাইরে বড় ধরনের সংযোজনের সম্ভাবনা নেই বলেই মন্তব্য তাদের। এর মধ্যে সাম্প্রতিক প্রযুক্তি মেমরিস্টর নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও বাণিজ্যিকভাবে মেমরিস্টরের ব্যবহারে তৈরি স্টোরেজ ডিভাইস আগামী দশ বছরের মধ্যেও বাজারে আসবে না বলেই জানা গেছে। আবার লং টার্ম আর্কাইভাল স্টোরেজ এর মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করলেও সেগুলো মূলধারায় আসতে পারেনি এবং মূলধারায় আসতে এসব স্টোরেজ ডিভাইসেরও আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। এর বাইরে বাবল মেমোরি, হলোগ্রাফিক, ফেরোইলেক্ট্রিক্যাল র্যাম, পলিমার মেমোরি, ফেজ চেঞ্জ মেমোরি প্রভৃতি প্রযুক্তিগুলো এখনও গবেষণার পর্যায়েই রয়েছে। ফলে এগুলোর বাণিজ্যিক উত্পাদনও সহসাই শুরু হচ্ছে না। আগামীতে ক্লাউড স্টোরেজের ব্যবহারও আরো বাড়বে।