ঢাকা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনার আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে :মোদীর প্রতিশ্রুতি

জাতীয় ডেস্কঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের আমলেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি সমাধান হবে। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

 

নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমার মনে যে অনুভূতি, আমি মনে করি একই উষ্ণ অনুভূতি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মনেও। আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) ও বাংলাদেশের জনগণকে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার সরকার ও শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।’

 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে পারস্পরিক উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া আরো এগিয়ে নিতে আমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিস্তার মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর অববাহিকা-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনাসহ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’

 

বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি এবং সমঝোতার বেশিরভাগই হচ্ছে প্রতিরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত। প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১৮টি প্রকল্পের বিপরীতে আরো সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে।  দুই সরকারের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ছাড়াও ব্যবসায়ী ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আরো ১৪টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান।

 

সাত বছর থেকে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রধান বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নয়াদিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, সাংবাদিক সম্মেলন ও মধ্যাহ্নভোজসহ সকল কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই নিজের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। সবদিক খতিয়ে দেখে শিগগিরই তার সরকারের পক্ষ থেকে একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে

 

বোঝাপড়া হয়েছে:শেখ হাসিনা

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি জোরদারের পাশাপাশি অপরাধ কার্যক্রমমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ সীমান্ত গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, তিস্তার মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইস্যুর সমাধানে আমরা ভারতের সমর্থন পাবো। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তার চমত্কার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এই বৈঠককে তিনি ফলপ্রসূ হিসেবে বর্ণনা করেন।

 

তিনি জানান, পারস্পরিক উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া আরো এগিয়ে নিতে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত যে, এ দুইটি দেশের উন্নয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমরা খুলনা-কলকাতা রুটে নতুন যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস, পরীক্ষামূলকভাবে খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং মালামাল পরিবহনের জন্য বিরল-রাধিকাপুর রেলপথটি পুনরায় চালু করতে যাচ্ছি।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে ভাল পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ উদ্বোধন করেছি এবং নেপাল ও ভুটান থেকে ক্রসবর্ডার বিদ্যুত্ আমদানির বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে আরো বেশকিছু উদ্যোগ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে তার সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজ দুইটি দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে বিবিধ জায়গায় সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবহার, আউটার স্পেস, যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণমাধ্যম প্রভৃতি। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের জনগণকে ‘শুভ নববর্ষ’ বলে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান।

 

হাসিনা সরকারের আমলেই

 

তিস্তা চুক্তি হবে:মোদী

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিস্তা ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তিস্তা সমস্যার সমাধান কেবল আমার সরকার এবং শেখ হাসিনার সরকারই করতে সক্ষম হবে এবং যতশিগগির সম্ভব তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন স্থলসীমান্ত ও নদ-নদী রয়েছে। আমাদের জনগণ সেখানে বসবাস করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে।

 

প্রধানমন্ত্রী মোদী তিস্তাকে ভারতের জন্য, বাংলাদেশের জন্য এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। তবে এ বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের বিষয় বলেও উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘আমি জানি বাংলাদেশের জন্য মমতা ব্যানার্জির দরদ আছে, আমারও আছে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে বলছি, তিস্তা সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৫ সালের জুন মাসে ঢাকা সফরের উল্লেখ করে বলেন, তার এ সফরের সময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং এই চুক্তি এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এই অঞ্চলের জন্য এখন একটি হুমকি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

 

তিনি বলেন,  আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে এক সঙ্গে কাজ করব। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে না, এই গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ সবসময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে। আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, দুই দেশের সহযোগিতার সুফল অবশ্যই আমাদের জনগণ পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে, কিছু উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেখানে দু’দেশের যুবসমাজের সম্পৃক্ততা থাকবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক, তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা ও বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তাঁর দেশ দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সৃষ্টি করতে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমরা এটি বাস্তবায়ন করব।

 

২২ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি এবং সমঝোতার বেশিরভাগই হচ্ছে প্রতিরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত। ভারতের পররাষ্ট্র দফতর থেকে চুক্তি এবং এমওইউ’র যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় প্রথম তিনটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত। এর প্রথমটি হচ্ছে ‘ডিফেন্স কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো বিষয়ে। অপর দুটি ভারতের দুটি ডিফেন্স স্টাফ কলেজের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের।

 

পরমাণু শক্তি নিয়ে সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। একটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে দুই দেশের সীমান্তে যে হাটগুলো বসে সে সংক্রান্ত। এছাড়া বিচার সংক্রান্ত, লাইন অব ক্রেডিট, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌ চলাচল সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। জানা যায়, সব মিলিয়ে মোট ৩৬টি চুক্তি সই হয়েছে। ২২টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আর ১৪টি ব্যবসা সংক্রান্ত। চুক্তি সইয়ের পর নরেন্দ্র মোদী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি পর্যায়ে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। বাংলাদেশের খুলনা থেকে ভারতের কলকাতা ট্রেন সার্ভিস এবং রাধিকাপুর-বিরল রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করেন তাঁরা।

 

মহাত্মা গান্ধীর শোক বইয়ে যা লিখলেন প্রধানমন্ত্রী

 

ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সকালে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সমাধিতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

 

পরে শোক বইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত। মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ এশিয়াসহ সারাবিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন আমাদের মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অনুপ্রাণিত করেছে। মহাত্মার আদর্শ অনাগত ভবিষ্যতের সকলের জন্য অনুকরণীয় হতে থাকবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, সচিবগণ ও দেশের বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা।

 

এর আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা গ্রহণের মাধ্যমে চারদিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেন শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেয়।

 

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের সম্মাননা

 

শনিবার নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বন্ধু হওয়ার কারণে যতটা সহযোগিতা করতে পারে ভারত, সেটা তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য করা হবে। কারণ যে স্বপ্ন ভারতের জন্য আমি দেখি, সেই শুভকামনা বাংলাদেশের জন্য রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এজন্য একসঙ্গে এগিয়ে যায়, কারণ প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ একজন আরেকজনের পাশে আছে।

 

বঙ্গবন্ধুর নামে নয়াদিল্লিতে সড়কের ফলক উন্মোচন

 

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্রের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল যৌথভাবে এই সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন। কনট প্লেসের নিকটবর্তী এই স্থানটি ইতিপূর্বে ‘পার্ক স্ট্রিট’ নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর নামে ভারতের রাজধানীর একটি সড়কের নামকরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান।

 

হিন্দিতে অনূদিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

 

হিন্দি ভাষায় অনূদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার দুপুরে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, ফরাসিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

হাসিনার আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে :মোদীর প্রতিশ্রুতি

আপডেট সময় ০৫:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের আমলেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি সমাধান হবে। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

 

নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমার মনে যে অনুভূতি, আমি মনে করি একই উষ্ণ অনুভূতি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মনেও। আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) ও বাংলাদেশের জনগণকে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার সরকার ও শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।’

 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে পারস্পরিক উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া আরো এগিয়ে নিতে আমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিস্তার মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর অববাহিকা-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনাসহ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’

 

বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি এবং সমঝোতার বেশিরভাগই হচ্ছে প্রতিরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত। প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১৮টি প্রকল্পের বিপরীতে আরো সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে।  দুই সরকারের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ছাড়াও ব্যবসায়ী ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আরো ১৪টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান।

 

সাত বছর থেকে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রধান বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নয়াদিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, সাংবাদিক সম্মেলন ও মধ্যাহ্নভোজসহ সকল কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই নিজের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। সবদিক খতিয়ে দেখে শিগগিরই তার সরকারের পক্ষ থেকে একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে

 

বোঝাপড়া হয়েছে:শেখ হাসিনা

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি জোরদারের পাশাপাশি অপরাধ কার্যক্রমমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ সীমান্ত গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, তিস্তার মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইস্যুর সমাধানে আমরা ভারতের সমর্থন পাবো। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তার চমত্কার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এই বৈঠককে তিনি ফলপ্রসূ হিসেবে বর্ণনা করেন।

 

তিনি জানান, পারস্পরিক উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া আরো এগিয়ে নিতে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী একমত যে, এ দুইটি দেশের উন্নয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমরা খুলনা-কলকাতা রুটে নতুন যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস, পরীক্ষামূলকভাবে খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং মালামাল পরিবহনের জন্য বিরল-রাধিকাপুর রেলপথটি পুনরায় চালু করতে যাচ্ছি।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে ভাল পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ উদ্বোধন করেছি এবং নেপাল ও ভুটান থেকে ক্রসবর্ডার বিদ্যুত্ আমদানির বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে আরো বেশকিছু উদ্যোগ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে তার সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজ দুইটি দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে বিবিধ জায়গায় সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবহার, আউটার স্পেস, যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণমাধ্যম প্রভৃতি। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের জনগণকে ‘শুভ নববর্ষ’ বলে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান।

 

হাসিনা সরকারের আমলেই

 

তিস্তা চুক্তি হবে:মোদী

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিস্তা ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তিস্তা সমস্যার সমাধান কেবল আমার সরকার এবং শেখ হাসিনার সরকারই করতে সক্ষম হবে এবং যতশিগগির সম্ভব তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন স্থলসীমান্ত ও নদ-নদী রয়েছে। আমাদের জনগণ সেখানে বসবাস করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে।

 

প্রধানমন্ত্রী মোদী তিস্তাকে ভারতের জন্য, বাংলাদেশের জন্য এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। তবে এ বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের বিষয় বলেও উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘আমি জানি বাংলাদেশের জন্য মমতা ব্যানার্জির দরদ আছে, আমারও আছে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে বলছি, তিস্তা সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৫ সালের জুন মাসে ঢাকা সফরের উল্লেখ করে বলেন, তার এ সফরের সময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং এই চুক্তি এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এই অঞ্চলের জন্য এখন একটি হুমকি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

 

তিনি বলেন,  আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে এক সঙ্গে কাজ করব। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে না, এই গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ সবসময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে। আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, দুই দেশের সহযোগিতার সুফল অবশ্যই আমাদের জনগণ পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে, কিছু উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেখানে দু’দেশের যুবসমাজের সম্পৃক্ততা থাকবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক, তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা ও বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তাঁর দেশ দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সৃষ্টি করতে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমরা এটি বাস্তবায়ন করব।

 

২২ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি এবং সমঝোতার বেশিরভাগই হচ্ছে প্রতিরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত। ভারতের পররাষ্ট্র দফতর থেকে চুক্তি এবং এমওইউ’র যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় প্রথম তিনটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত। এর প্রথমটি হচ্ছে ‘ডিফেন্স কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো বিষয়ে। অপর দুটি ভারতের দুটি ডিফেন্স স্টাফ কলেজের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের।

 

পরমাণু শক্তি নিয়ে সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। একটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে দুই দেশের সীমান্তে যে হাটগুলো বসে সে সংক্রান্ত। এছাড়া বিচার সংক্রান্ত, লাইন অব ক্রেডিট, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌ চলাচল সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। জানা যায়, সব মিলিয়ে মোট ৩৬টি চুক্তি সই হয়েছে। ২২টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আর ১৪টি ব্যবসা সংক্রান্ত। চুক্তি সইয়ের পর নরেন্দ্র মোদী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি পর্যায়ে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। বাংলাদেশের খুলনা থেকে ভারতের কলকাতা ট্রেন সার্ভিস এবং রাধিকাপুর-বিরল রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করেন তাঁরা।

 

মহাত্মা গান্ধীর শোক বইয়ে যা লিখলেন প্রধানমন্ত্রী

 

ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সকালে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সমাধিতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

 

পরে শোক বইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত। মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ এশিয়াসহ সারাবিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন আমাদের মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অনুপ্রাণিত করেছে। মহাত্মার আদর্শ অনাগত ভবিষ্যতের সকলের জন্য অনুকরণীয় হতে থাকবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, সচিবগণ ও দেশের বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা।

 

এর আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা গ্রহণের মাধ্যমে চারদিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেন শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেয়।

 

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের সম্মাননা

 

শনিবার নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বন্ধু হওয়ার কারণে যতটা সহযোগিতা করতে পারে ভারত, সেটা তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য করা হবে। কারণ যে স্বপ্ন ভারতের জন্য আমি দেখি, সেই শুভকামনা বাংলাদেশের জন্য রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এজন্য একসঙ্গে এগিয়ে যায়, কারণ প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ একজন আরেকজনের পাশে আছে।

 

বঙ্গবন্ধুর নামে নয়াদিল্লিতে সড়কের ফলক উন্মোচন

 

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্রের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল যৌথভাবে এই সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন। কনট প্লেসের নিকটবর্তী এই স্থানটি ইতিপূর্বে ‘পার্ক স্ট্রিট’ নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর নামে ভারতের রাজধানীর একটি সড়কের নামকরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান।

 

হিন্দিতে অনূদিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

 

হিন্দি ভাষায় অনূদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার দুপুরে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, ফরাসিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।