ঢাকা ১২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম মুরাদনগরবাসী

0329 

মো: শরিফুল আলম চৌধুরীঃ

২৩ মার্চ ২০১৫ ইং (মুরাদনগর বাতাং ডটকম):

মুরাদনগরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মুখোশধারী গ্রিল ও সিধ কাটা ডাকাত চক্র। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিরাতেই মুরাদনগরের কোথাও না কোথাও ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় থানায় বিভিন্ন সময় মামলা হলেও একটিরও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে ডাকাতিও বেড়ে চলছে দিনদিন। আর সবকিছু হারানোর আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এ উপজেলাবাসীর। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভরসা করতে না পেরে বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বসিয়েছেন পাহারা। সতর্ক থাকতে ঘোষণা দেওয়া হয় মহল্লার মসজিদের মাইকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার দক্ষিন এলাকায় চলতি বছরের তিন মাসে অর্ধশত ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অনেকেই স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার সম্পদ হারিয়েছেন। অনেকেই আবার ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে হয়েছেন পঙ্গু।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এসব ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ চুরি হিসেবে চালিয়ে দেয়। এজহারেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম দেখানো হয়। এতে প্রকৃত ঘটনা যেমন ঢাকা পড়ে যায় তেমনি জড়িতরাও পার পেয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর উপজেলার পাটুয়াটুলী গ্রামের সুশীল চন্দ্র সরকার, অমর চন্দ্র সরকার, মনি লাল  সরকার, সুভাষ চন্দ্র সরকার, টিশন চন্দ্র সরকার, কেশব কুমার সরকার, হারাদন মন্ডল ও ওমান প্রবাসী আবুল কাশেম মিয়্ার বাড়িতে আবারো ডাকাতি হয়েছে। অস্ত্রধারী ডাকাত দল ওই আট বাড়ির ৫১টি ঘরে শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে চাল-ডাল, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল সেটসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়।

এদিন ঘরের সিধ ও গ্রিল কেটে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ৫৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৮লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত চক্রটি।
আনন্দ বৈরাগী জানান, বাড়িরতে মুখোশধারী ৫০-৬০ ডাকাত বারান্দার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। এসময় তারা তার পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

একই রাতে উপজেলার নেয়াতমকান্দি গ্রামে ওমান প্রবাসী মো: আবুল কাশেমের বাড়িতে মাকে নিয়ে বেড়াতে আসা মাদ্রাসা ছাত্র মিজানুর রহমানের ওপরও হানা দেয় ডাকাত দল। একই কায়দায় সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় এতিম মিজানুর রহমান ও তার মা বিধবা দেলোয়ারা বেগমের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ মার্চ মঙ্গলবার  সকালে উপজেলার মেলামচর গাছতলা অনিল দাস পরিমল করের বাড়ির গ্রিল কেটে মালামাল চুরি করে ডাকাতরা।
১৮ মার্চ বাখরাবাদ -ইলিয়টগঞ্জ সড়ক এলাকায় মাদবপুরে লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এসময় বাধা দিতে চাইলে ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে আশেক আলী মন্ডল নামে এক জনকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

এসব ঘটনায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো মালামাল উদ্ধার কিংবা জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বাড়লেও অপরাধীদের ধরতে পারছে না পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাখরাবাদ বাজার মোড় এলাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, নগরীতে রাত হলেই অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও তাদের সখ্যতা দেখা যায়।

এব্যাপারে মুরাদনগর থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, ডাকাতির ঘটনা নিশ্চয় উদ্বেগের বিষয়। যেকোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপজেলার রাস্তা ঘাটে রাতে অপরিচিত মুখ ও সন্দেহভাজনদের প্রতি নজরদারী রাখা হচ্ছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম মুরাদনগরবাসী

আপডেট সময় ০৮:৪৮:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ মার্চ ২০১৫

0329 

মো: শরিফুল আলম চৌধুরীঃ

২৩ মার্চ ২০১৫ ইং (মুরাদনগর বাতাং ডটকম):

মুরাদনগরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মুখোশধারী গ্রিল ও সিধ কাটা ডাকাত চক্র। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিরাতেই মুরাদনগরের কোথাও না কোথাও ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় থানায় বিভিন্ন সময় মামলা হলেও একটিরও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে ডাকাতিও বেড়ে চলছে দিনদিন। আর সবকিছু হারানোর আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এ উপজেলাবাসীর। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভরসা করতে না পেরে বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বসিয়েছেন পাহারা। সতর্ক থাকতে ঘোষণা দেওয়া হয় মহল্লার মসজিদের মাইকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার দক্ষিন এলাকায় চলতি বছরের তিন মাসে অর্ধশত ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অনেকেই স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার সম্পদ হারিয়েছেন। অনেকেই আবার ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে হয়েছেন পঙ্গু।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এসব ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ চুরি হিসেবে চালিয়ে দেয়। এজহারেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম দেখানো হয়। এতে প্রকৃত ঘটনা যেমন ঢাকা পড়ে যায় তেমনি জড়িতরাও পার পেয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর উপজেলার পাটুয়াটুলী গ্রামের সুশীল চন্দ্র সরকার, অমর চন্দ্র সরকার, মনি লাল  সরকার, সুভাষ চন্দ্র সরকার, টিশন চন্দ্র সরকার, কেশব কুমার সরকার, হারাদন মন্ডল ও ওমান প্রবাসী আবুল কাশেম মিয়্ার বাড়িতে আবারো ডাকাতি হয়েছে। অস্ত্রধারী ডাকাত দল ওই আট বাড়ির ৫১টি ঘরে শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে চাল-ডাল, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল সেটসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়।

এদিন ঘরের সিধ ও গ্রিল কেটে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ৫৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৮লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত চক্রটি।
আনন্দ বৈরাগী জানান, বাড়িরতে মুখোশধারী ৫০-৬০ ডাকাত বারান্দার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। এসময় তারা তার পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

একই রাতে উপজেলার নেয়াতমকান্দি গ্রামে ওমান প্রবাসী মো: আবুল কাশেমের বাড়িতে মাকে নিয়ে বেড়াতে আসা মাদ্রাসা ছাত্র মিজানুর রহমানের ওপরও হানা দেয় ডাকাত দল। একই কায়দায় সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় এতিম মিজানুর রহমান ও তার মা বিধবা দেলোয়ারা বেগমের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ মার্চ মঙ্গলবার  সকালে উপজেলার মেলামচর গাছতলা অনিল দাস পরিমল করের বাড়ির গ্রিল কেটে মালামাল চুরি করে ডাকাতরা।
১৮ মার্চ বাখরাবাদ -ইলিয়টগঞ্জ সড়ক এলাকায় মাদবপুরে লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এসময় বাধা দিতে চাইলে ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে আশেক আলী মন্ডল নামে এক জনকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

এসব ঘটনায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো মালামাল উদ্ধার কিংবা জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বাড়লেও অপরাধীদের ধরতে পারছে না পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাখরাবাদ বাজার মোড় এলাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, নগরীতে রাত হলেই অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও তাদের সখ্যতা দেখা যায়।

এব্যাপারে মুরাদনগর থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, ডাকাতির ঘটনা নিশ্চয় উদ্বেগের বিষয়। যেকোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপজেলার রাস্তা ঘাটে রাতে অপরিচিত মুখ ও সন্দেহভাজনদের প্রতি নজরদারী রাখা হচ্ছে।