ঢাকা ১০:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরে ৭১ এ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন

মুরাদনগর বার্তা ডেস্কঃ

৪৮ বছর পর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাখরাবাদে শরিবার দুপুরে শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ “প্রদীপ্ত তিতাস ” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

শহীদ তনয় দুলাল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলআমিন সরকারের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক ও প্রধান উপদেশ্টা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

বিশেষ অতিথি ছিলেন স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সমীর বরন সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য ভিপি জাকির হোসেন ( ভিপি) শিক্ষক বেগম, কুমিল্লা উঃ জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলআমিন সরকার,রামচন্দ্রপুর উঃ ইউনিয়নের সভাপতি হাজী জীবন মিয়া মেম্বার, সাধারন সম্পাদক হাজী আব্দুল হাকিম, যুবলীগ নেতা কাজল,ইকবাল সরকার, জসিম উদ্দীন, সাদেক হোসেন মেম্বার, জুলহাস মিয়া প্রমূখ। অনু্ষ্ঠান শেষে অতিথিগন মুক্তিযুদ্ধকালীন চিত্র প্রদর্শনী করেন।

২৪ মে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ইতিহাসে এক নৃশংস, ভয়ংকর, মর্মান্তিক বিভীষিকাময় কাল দিবস। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের উত্তর বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটিকে উপজেলাবাসী ”গনহত্যা দিবস” হিসেবে পালন করে। অপর দিকে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রানের দাবি থাকলেও স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও তা পূরণ হয়নি। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ ১৯৯৬ ও ৯৭ সালে পর পর ২ বছর আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী ও স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড প্রদর্শিত হলেও উদ্যোগের অভাবে এখন আর হচ্ছে না। ফলে ভূক্তভোগী পরিবার গুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৪ মে এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার সংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম বাখরাবাদে নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু নারী পুরুষ পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে লুটপাট করে। পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জন ব্যক্তিকে পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে পরদিন ১৮ জনকে এক সাথে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

এদের মধ্যে দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্র চন্দ্র সাহার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হরেকৃষ্ণ সাহা জানান, ৭১’র ২৪ মে সোমবার ভোর ৫টায় পাক হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে হত্যাকান্ড চালায়, হত্যাকান্ড চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বাড়ী ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ নারী ধর্ষণ করে।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বাখরাবাদ গণহত্যার স্মৃতি স্বরূপ কোন স্মৃতি সৌধ নির্মান হয়নি আজ যখন জানতে পারলাম স্মৃতিসৌধ করার জন্য ভিত্তি প্রম্তর স্থাপন হচ্ছে অনেক আনন্দ লাগছে।
তাছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারেরা সরকার থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করেন। তার সাথে বেঁচে যাওয়া অপর ২জন হলো দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শীলের ছেলে তারক শীল (তারক মাস্টার) ও শহীদ মনোমোহন সাহার ছেলে ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত দুলাল চন্দ্র সাহা।

বাখরাবাদ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান সফু মিয়া সরকার জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এ বর্বোরিচিত হত্যাকান্ডের বীভৎস চিত্র প্রত্যক্ষ করে আজো শিহরিত হই। ঝোপ ঝাড়ে আনাচে কানাচে এবং পাশে বয়ে যাওয়া খালে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখি। বাখরাবাদ গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্র্যাজেডি। দীর্ঘদিনের আকাংখা ছিল সরকারী ভাবে কিছু হবে তা হয়নি আজ আমার ছোট ভাই আলাহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলমসহ যাদের সহযোগীতায় স্মৃতিসৌধ হচ্ছে তাদের ধন্যবাদ জানাই।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

ছাত্র আন্দেলনে আহতদের হাসপাতালে দেখে উপদেষ্টারা প্রতিদিন অফিসে যাওয়া উচিত –কায়কোবাদ

মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরে ৭১ এ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন

আপডেট সময় ০৭:৩০:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯
মুরাদনগর বার্তা ডেস্কঃ

৪৮ বছর পর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাখরাবাদে শরিবার দুপুরে শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ “প্রদীপ্ত তিতাস ” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

শহীদ তনয় দুলাল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলআমিন সরকারের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক ও প্রধান উপদেশ্টা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

বিশেষ অতিথি ছিলেন স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সমীর বরন সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য ভিপি জাকির হোসেন ( ভিপি) শিক্ষক বেগম, কুমিল্লা উঃ জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলআমিন সরকার,রামচন্দ্রপুর উঃ ইউনিয়নের সভাপতি হাজী জীবন মিয়া মেম্বার, সাধারন সম্পাদক হাজী আব্দুল হাকিম, যুবলীগ নেতা কাজল,ইকবাল সরকার, জসিম উদ্দীন, সাদেক হোসেন মেম্বার, জুলহাস মিয়া প্রমূখ। অনু্ষ্ঠান শেষে অতিথিগন মুক্তিযুদ্ধকালীন চিত্র প্রদর্শনী করেন।

২৪ মে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ইতিহাসে এক নৃশংস, ভয়ংকর, মর্মান্তিক বিভীষিকাময় কাল দিবস। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের উত্তর বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটিকে উপজেলাবাসী ”গনহত্যা দিবস” হিসেবে পালন করে। অপর দিকে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রানের দাবি থাকলেও স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও তা পূরণ হয়নি। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ ১৯৯৬ ও ৯৭ সালে পর পর ২ বছর আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী ও স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড প্রদর্শিত হলেও উদ্যোগের অভাবে এখন আর হচ্ছে না। ফলে ভূক্তভোগী পরিবার গুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৪ মে এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার সংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম বাখরাবাদে নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু নারী পুরুষ পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে লুটপাট করে। পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জন ব্যক্তিকে পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে পরদিন ১৮ জনকে এক সাথে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

এদের মধ্যে দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্র চন্দ্র সাহার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হরেকৃষ্ণ সাহা জানান, ৭১’র ২৪ মে সোমবার ভোর ৫টায় পাক হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে হত্যাকান্ড চালায়, হত্যাকান্ড চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বাড়ী ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ নারী ধর্ষণ করে।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বাখরাবাদ গণহত্যার স্মৃতি স্বরূপ কোন স্মৃতি সৌধ নির্মান হয়নি আজ যখন জানতে পারলাম স্মৃতিসৌধ করার জন্য ভিত্তি প্রম্তর স্থাপন হচ্ছে অনেক আনন্দ লাগছে।
তাছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারেরা সরকার থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করেন। তার সাথে বেঁচে যাওয়া অপর ২জন হলো দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শীলের ছেলে তারক শীল (তারক মাস্টার) ও শহীদ মনোমোহন সাহার ছেলে ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত দুলাল চন্দ্র সাহা।

বাখরাবাদ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান সফু মিয়া সরকার জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এ বর্বোরিচিত হত্যাকান্ডের বীভৎস চিত্র প্রত্যক্ষ করে আজো শিহরিত হই। ঝোপ ঝাড়ে আনাচে কানাচে এবং পাশে বয়ে যাওয়া খালে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখি। বাখরাবাদ গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্র্যাজেডি। দীর্ঘদিনের আকাংখা ছিল সরকারী ভাবে কিছু হবে তা হয়নি আজ আমার ছোট ভাই আলাহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলমসহ যাদের সহযোগীতায় স্মৃতিসৌধ হচ্ছে তাদের ধন্যবাদ জানাই।