ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যা ঠেকাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:

চীনের ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী লি ফ্যান দেশটির টুইটার-সদৃশ প্ল্যাটফরম উইবোতে বিশদ মেসেজ পোস্ট করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেটা ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডের পরদিন।

সে লিখেছিল ‘আমি আর পারছি না, আমি সব ছেড়ে দিচ্ছি।’ এর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে ঋণগ্রস্ত ছিল। এছাড়া মায়ের সঙ্গে বিবাদ চলছিল এবং চরম বিষণ্নতায় ভুগছিল সে। তার বিশ্ববিদ্যালয় নানজিং থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আমস্টারডামের একটি কম্পিউটারে চলমান এক প্রোগ্রামে শনাক্ত করা হয় চীনের এই শিক্ষার্থীর পোস্টটি। ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রামটি মেসেজটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে চীনের বিভিন্ন এলাকায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আনে যাতে তারা দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারে। যখন তারা এত দূর থেকে লিকে জাগিয়ে তুলেতে সক্ষম হলো না তখন স্থানীয় পুলিশের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানায় এবং এরপর তারা এসে তাকে বাঁচায়। শুনতে নিশ্চয়ই এটা খুব বিস্ময়কর বা অসাধারণ শোনাচ্ছে কিন্তু ট্রি হোল রেসকিউ টিমের সদস্যদের আরো অনেক সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে এটা একটি মাত্র। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তিটি হচ্ছেন হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। গত ১৮ মাসে চীন জুড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক তার এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে, যারা বলছে প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি মানুষকে তারা বাঁচিয়েছে।

বিবিসি নিউজকে মিস্টার হুয়াং বলছিলেন, ‘এক সেকেন্ড যদি আপনি ইতস্তত করেন, অনেক প্রাণ শেষ হয়ে যাবে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ জনকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম।’

প্রথম রেসকিউ অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শ্যানডং প্রদেশের ২২ বছর বয়সি আরেক তরুণী তাও ইয়ো, উইবোতে লিখেছিল যে দুই দিন পরে নিজেকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবক পেং লিং নামে এবং আরো কয়েক জন বিষয়টিতে বিচলিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। মিজ পেং বিবিসিকে বলেন, ‘তারা আগের এক পোস্ট থেকে ঐ শিক্ষার্থীর একজন বন্ধুর ফোন নম্বর পান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। আমি ঘুমানোর আগে তাকে মেসেজ করার চেষ্টা করি এবং বলি যে আমি তাকে তুলতে পারব। তার উইচ্যাট মেসেজ গ্রুপের একজন বন্ধু হিসেবে সে আমাকে যুক্ত করে এবং ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তখন থেকে তার দিকে আমি নজর রাখতাম যেমন সে খাচ্ছে কি না। আমরা সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাকে একগুচ্ছ করে ফুল কিনে দিতাম।’ এই সাফল্যের পরে এই উদ্ধার দলের সদস্যরা একজন পুরুষকে উদ্ধার করে যিনি একটি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল এবং একজন নারীকে বাঁচায় যে কি না যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

বেইজিং এর একজন মনোবিজ্ঞানী লি হং যিনি এই প্রোগ্রামের সঙ্গে এক বছর ধরে জড়িত আছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের জন্য দরকার ভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটোই। সব হোটেলের অভ্যর্থনা-কর্মীরা সবাই বলতো তারা ঐ নারীর সম্পর্কে কিছু জানে না। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করছিলেন । তখন আমরা ধরে নিলাম যে এটা নিশ্চয়ই সেই হোটেল—এবং তাই ছিল।’ তিনি স্মরণ করেন কীভাবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা চেং-ডুর আটটি হোটেলে পরিদর্শন করেন, আত্মহননে চেষ্টাকারী একজন নারীকে খুঁজতে একটি রুমও বুকিং দেন।

প্রযুক্তিটি যেভাবে কাজ করে

জাভা-বেজড এই প্রোগ্রামটি উইবোতে কিছু ‘ট্রি হোলস’ মনিটর করে এবং সেখানে পোস্ট করা কিছু বার্তা বিশ্লেষণ করে থাকে। একটি ‘ট্রি হোল’ হচ্ছে ইন্টারনেটে যেসব জায়গায় লোকজন অন্যদের পড়ার জন্য গোপনে পোস্ট করে তার একটি চীনা নাম। এই নামকরণে পেছনে রয়েছে আইরিশ কাহিনী যেখানে একজন ব্যক্তি তার সব গোপন কিছু একটি গাছের কাছে গিয়ে বলতেন। জোও ফানের দেওয়া পোস্ট এর একটি উদাহরণ—২৩ বছর বয়সি এই চীনা শিক্ষার্থী ২০১২ সালে আত্মহত্যার আগে উইবোতে একটি মেসেজ লিখেন। তার মৃত্যুর পর দশ হাজারের বেশি অন্যান্য ব্যবহারকারী তা পোস্টে মন্তব্য করেন, তাদের নিজেদের নিজস্ব সমস্যাগুলো তুলে ধরে। এভাবে মূল মেসেজটি একটি ট্রি হোল হিসেবে রূপ নেয়।

এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ ধরনের কোনো পোস্ট শনাক্ত করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে এক থেকে ১০ এর মধ্যে র্যাংক দেওয়া হয়। র্যাংকে নাইন বা ৯ হলে বুঝতে হবে খুব শীঘ্রই একটি আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো হবে। টেন বা ১০ নম্বর র্যাংকিং মানে হলো, ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকরা সরাসরি পুলিশকে খবর দেয়, সেই সঙ্গে ঐ ব্যক্তির পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু যদি র্যাংকিং ছয়ের নিচে থাকে—তার মানে কেবল নেতিবাচক কথাবার্তা শনাক্ত করা হয়েছে—স্বেচ্ছাসেবকরা সাধারণত হস্তক্ষেপ করেন না। এসব ঘটনায় সেসব ইস্যুর মধ্যে একটি হলো বিষণ্নতা সম্পর্কে বয়স্ক আত্মীয়দের মনোভাব যে, এটা ‘বড়ো কিছু’ না।

মিস্টার লি বিবিসি নিউজকে আরো বলেন, ‘আমি জানি যখন হাই স্কুলে ছিলাম আমার মধ্যে বিষণ্নতার সমস্যা ছিল কিন্তু আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, এটা ‘একেবারে অসম্ভব—এ সম্পর্কে আর কখনোই কিছু ভাববে না।’ এই প্রোগ্রামে একজন তরুণীর পোস্ট শনাক্ত হয়। যেখানে সে লিখেছে, ‘আমি নিজেকে হত্যা করব যখন নতুন বছর আসবে।’ কিন্তু যখন স্বেচ্ছাসেবকরা তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এই মুহূর্তে খুবই আনন্দিত ছিল। আপনার কত বড়ো সাহস যে বলছেন, সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে?’ এমনকি স্বেচ্ছাসেবকরা তার মেয়ের বিষণ্নতার বিষয়ে প্রমাণ তুলে ধরার পরেও তার মা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।

দীর্ঘ যাত্রা

এর সফলতা সত্ত্বেও, মিস্টার হুয়াং তার প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কারণ উইবোর পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রতিদিন কেবল ৩ হাজার পোস্ট একত্র করতে পারেন। মিজ লি বলেন, ‘ আমার জীবনের বেশির ভাগই এখন এই উদ্ধার হওয়া মানুষের জন্য কেটে যায় ।’ কখনো কখনো তিনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে তিনি আট জন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন যাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

সুতরাং একদিনে আমরা গড়ে কেবল একটি বা দুটি পোস্ট সেভ করতে পারি এবং সবচেয়ে জরুরি ঘটনা যেটি সেখানেই আমরা মনোযোগ দেই। তবে অনেক সদস্য অফলাইনে সহায়তা করেন। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—আত্মহত্যার চিন্তা বা ইচ্ছা আবার ফিরে আসতে পারে।

মিজ পেং একজন খুবই অল্পবয়সি একজনের উদাহরণ তুলে ধরেন, যাকে উদ্ধার করার পর প্রতিদিন বেশ ভালো বলে মনে হতো, কিন্তু সে এরপর আত্মহত্যা করে। সে আমাকে বলছিল শুক্রবার নতুন একটি ফটো পোট্রেট পাওয়ার বিষয়ে। দুই দিন পরে তার মৃত্যু!

মিজ পেং বলেন ‘একজন মানুষের সঙ্গে একটা দীর্ঘ সময় ধরে আমি আছি এবং হঠাত্ করে সে নেই এটা আমার জন্য বিশাল এক ধাক্কা।’ মিস্টার লি যার কথা শুরুতে বলা হয়েছিল, সে কিন্তু বেশ সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বেঁচে আছে এবং এখন একটি হোটেলে কাজ করে।

সূত্র : বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ

আত্মহত্যা ঠেকাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি

আপডেট সময় ০৪:২৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:

চীনের ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী লি ফ্যান দেশটির টুইটার-সদৃশ প্ল্যাটফরম উইবোতে বিশদ মেসেজ পোস্ট করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেটা ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডের পরদিন।

সে লিখেছিল ‘আমি আর পারছি না, আমি সব ছেড়ে দিচ্ছি।’ এর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে ঋণগ্রস্ত ছিল। এছাড়া মায়ের সঙ্গে বিবাদ চলছিল এবং চরম বিষণ্নতায় ভুগছিল সে। তার বিশ্ববিদ্যালয় নানজিং থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আমস্টারডামের একটি কম্পিউটারে চলমান এক প্রোগ্রামে শনাক্ত করা হয় চীনের এই শিক্ষার্থীর পোস্টটি। ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রামটি মেসেজটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে চীনের বিভিন্ন এলাকায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আনে যাতে তারা দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারে। যখন তারা এত দূর থেকে লিকে জাগিয়ে তুলেতে সক্ষম হলো না তখন স্থানীয় পুলিশের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানায় এবং এরপর তারা এসে তাকে বাঁচায়। শুনতে নিশ্চয়ই এটা খুব বিস্ময়কর বা অসাধারণ শোনাচ্ছে কিন্তু ট্রি হোল রেসকিউ টিমের সদস্যদের আরো অনেক সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে এটা একটি মাত্র। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তিটি হচ্ছেন হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। গত ১৮ মাসে চীন জুড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক তার এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে, যারা বলছে প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি মানুষকে তারা বাঁচিয়েছে।

বিবিসি নিউজকে মিস্টার হুয়াং বলছিলেন, ‘এক সেকেন্ড যদি আপনি ইতস্তত করেন, অনেক প্রাণ শেষ হয়ে যাবে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ জনকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম।’

প্রথম রেসকিউ অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শ্যানডং প্রদেশের ২২ বছর বয়সি আরেক তরুণী তাও ইয়ো, উইবোতে লিখেছিল যে দুই দিন পরে নিজেকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবক পেং লিং নামে এবং আরো কয়েক জন বিষয়টিতে বিচলিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। মিজ পেং বিবিসিকে বলেন, ‘তারা আগের এক পোস্ট থেকে ঐ শিক্ষার্থীর একজন বন্ধুর ফোন নম্বর পান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। আমি ঘুমানোর আগে তাকে মেসেজ করার চেষ্টা করি এবং বলি যে আমি তাকে তুলতে পারব। তার উইচ্যাট মেসেজ গ্রুপের একজন বন্ধু হিসেবে সে আমাকে যুক্ত করে এবং ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তখন থেকে তার দিকে আমি নজর রাখতাম যেমন সে খাচ্ছে কি না। আমরা সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাকে একগুচ্ছ করে ফুল কিনে দিতাম।’ এই সাফল্যের পরে এই উদ্ধার দলের সদস্যরা একজন পুরুষকে উদ্ধার করে যিনি একটি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল এবং একজন নারীকে বাঁচায় যে কি না যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

বেইজিং এর একজন মনোবিজ্ঞানী লি হং যিনি এই প্রোগ্রামের সঙ্গে এক বছর ধরে জড়িত আছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের জন্য দরকার ভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটোই। সব হোটেলের অভ্যর্থনা-কর্মীরা সবাই বলতো তারা ঐ নারীর সম্পর্কে কিছু জানে না। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করছিলেন । তখন আমরা ধরে নিলাম যে এটা নিশ্চয়ই সেই হোটেল—এবং তাই ছিল।’ তিনি স্মরণ করেন কীভাবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা চেং-ডুর আটটি হোটেলে পরিদর্শন করেন, আত্মহননে চেষ্টাকারী একজন নারীকে খুঁজতে একটি রুমও বুকিং দেন।

প্রযুক্তিটি যেভাবে কাজ করে

জাভা-বেজড এই প্রোগ্রামটি উইবোতে কিছু ‘ট্রি হোলস’ মনিটর করে এবং সেখানে পোস্ট করা কিছু বার্তা বিশ্লেষণ করে থাকে। একটি ‘ট্রি হোল’ হচ্ছে ইন্টারনেটে যেসব জায়গায় লোকজন অন্যদের পড়ার জন্য গোপনে পোস্ট করে তার একটি চীনা নাম। এই নামকরণে পেছনে রয়েছে আইরিশ কাহিনী যেখানে একজন ব্যক্তি তার সব গোপন কিছু একটি গাছের কাছে গিয়ে বলতেন। জোও ফানের দেওয়া পোস্ট এর একটি উদাহরণ—২৩ বছর বয়সি এই চীনা শিক্ষার্থী ২০১২ সালে আত্মহত্যার আগে উইবোতে একটি মেসেজ লিখেন। তার মৃত্যুর পর দশ হাজারের বেশি অন্যান্য ব্যবহারকারী তা পোস্টে মন্তব্য করেন, তাদের নিজেদের নিজস্ব সমস্যাগুলো তুলে ধরে। এভাবে মূল মেসেজটি একটি ট্রি হোল হিসেবে রূপ নেয়।

এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ ধরনের কোনো পোস্ট শনাক্ত করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে এক থেকে ১০ এর মধ্যে র্যাংক দেওয়া হয়। র্যাংকে নাইন বা ৯ হলে বুঝতে হবে খুব শীঘ্রই একটি আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো হবে। টেন বা ১০ নম্বর র্যাংকিং মানে হলো, ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকরা সরাসরি পুলিশকে খবর দেয়, সেই সঙ্গে ঐ ব্যক্তির পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু যদি র্যাংকিং ছয়ের নিচে থাকে—তার মানে কেবল নেতিবাচক কথাবার্তা শনাক্ত করা হয়েছে—স্বেচ্ছাসেবকরা সাধারণত হস্তক্ষেপ করেন না। এসব ঘটনায় সেসব ইস্যুর মধ্যে একটি হলো বিষণ্নতা সম্পর্কে বয়স্ক আত্মীয়দের মনোভাব যে, এটা ‘বড়ো কিছু’ না।

মিস্টার লি বিবিসি নিউজকে আরো বলেন, ‘আমি জানি যখন হাই স্কুলে ছিলাম আমার মধ্যে বিষণ্নতার সমস্যা ছিল কিন্তু আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, এটা ‘একেবারে অসম্ভব—এ সম্পর্কে আর কখনোই কিছু ভাববে না।’ এই প্রোগ্রামে একজন তরুণীর পোস্ট শনাক্ত হয়। যেখানে সে লিখেছে, ‘আমি নিজেকে হত্যা করব যখন নতুন বছর আসবে।’ কিন্তু যখন স্বেচ্ছাসেবকরা তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এই মুহূর্তে খুবই আনন্দিত ছিল। আপনার কত বড়ো সাহস যে বলছেন, সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে?’ এমনকি স্বেচ্ছাসেবকরা তার মেয়ের বিষণ্নতার বিষয়ে প্রমাণ তুলে ধরার পরেও তার মা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।

দীর্ঘ যাত্রা

এর সফলতা সত্ত্বেও, মিস্টার হুয়াং তার প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কারণ উইবোর পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রতিদিন কেবল ৩ হাজার পোস্ট একত্র করতে পারেন। মিজ লি বলেন, ‘ আমার জীবনের বেশির ভাগই এখন এই উদ্ধার হওয়া মানুষের জন্য কেটে যায় ।’ কখনো কখনো তিনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে তিনি আট জন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন যাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

সুতরাং একদিনে আমরা গড়ে কেবল একটি বা দুটি পোস্ট সেভ করতে পারি এবং সবচেয়ে জরুরি ঘটনা যেটি সেখানেই আমরা মনোযোগ দেই। তবে অনেক সদস্য অফলাইনে সহায়তা করেন। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—আত্মহত্যার চিন্তা বা ইচ্ছা আবার ফিরে আসতে পারে।

মিজ পেং একজন খুবই অল্পবয়সি একজনের উদাহরণ তুলে ধরেন, যাকে উদ্ধার করার পর প্রতিদিন বেশ ভালো বলে মনে হতো, কিন্তু সে এরপর আত্মহত্যা করে। সে আমাকে বলছিল শুক্রবার নতুন একটি ফটো পোট্রেট পাওয়ার বিষয়ে। দুই দিন পরে তার মৃত্যু!

মিজ পেং বলেন ‘একজন মানুষের সঙ্গে একটা দীর্ঘ সময় ধরে আমি আছি এবং হঠাত্ করে সে নেই এটা আমার জন্য বিশাল এক ধাক্কা।’ মিস্টার লি যার কথা শুরুতে বলা হয়েছিল, সে কিন্তু বেশ সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বেঁচে আছে এবং এখন একটি হোটেলে কাজ করে।

সূত্র : বিবিসি