ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬২ বছর পরও ভাষা সৈনিক বরকত এর ‘আহ’ শব্দটা আমাকে কাঁদায়—ভাষা সৈনিক ড. জসিম উদ্দিন

নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বেলা ১০টা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্ররা যখন ছোট ছোট দলে মেকিলে কলেজ হোস্টেলের গেইট দিয়ে বাহির হতে চাইছিল তখন পুলিশ তাদেরকে আটক করে ট্রাকে তুলে। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করলে ছাত্ররাও ইটপাটকেল মারতে থাকে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে। কিছু বোঝার আগেই ৩জন পুলিশ হাঁটু গেড়ে বসে অনর্গল গুলি ছুড়তে থাকে। আমি, শাহজাহান ও আবুল বরকত রাস্তা থেকে দ্বিতীয় ব্যারাকটির বারান্দায় দাঁড়াই।

আমার ডান পাশে বরকত আর বাম পাশে শাহজাহান। মুহুর্তের মধ্যে ধপাস করে বরকত মেঝেতে পড়ে যায়। আমি আর শাহজাহান বরকতকে তুলার চেষ্টা করলাম। বরকতের ডান পায়ের উরুর গোড়ায় গুলি লাগে। ইস্ত্রি করা খাকী রংয়ের প্যান্টে গুলির ছিদ্র দিয়ে কলকল করে রক্ত বের হচ্ছে। সিমেন্টের বারান্দায় রক্তস্রোত বইছে। যখন তাকে তুলে ধরার চেষ্টার করলাম তখন বরকতের ‘আহ’ শব্দটি আমার কানের মধ্যে আসে।

৬২ বছর পরও যেশব্দটা আমাকে আজও কাঁদায়। বরকতের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে সেদিন রাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা। সেদিন আমার ও শাহজাহানের কাপড় বরকতের তাজা রক্তে সিক্ত হয়ে গিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার তিতাসে মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত, ভাষা সৈনিক, বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ও লেখক ড. জসিম উদ্দিন আহম্মেদ একথাগুলো বলেন।

উদীয়মান প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, টাকার মাদকতায় আজ নীতি ও নৈতিকতা বিলপ্তির পথে। দেশে অর্থনীতির উন্নয়ন হলেও সামাজিক অবক্ষয় সমাজে গেড়ে বসেছে। যা থেকে তোমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আল্লাহর প্রদত্ত রাস্তায় জীবনকে ধাবিত করতে হবে, জানি কষ্ট হবে তারপরও সৎপথে উপার্জনের পন্থা বের করতে হবে আর পিতা-মাতাকে সম্মান করতে হবে। তবেই তোমাদের সুন্দর জীবন গড়ে উঠবে।

মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি মোঃ আব্দুল হালিম সরকারের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুল গণি, এডভোকেট মোঃ নাজমুল হুদা, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মোঃ গাজী উল হক চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ কামরুল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, গাজীপুর খান হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান রবিন, মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলী আকবর প্রমূখ।

আলোচনা সভার পূর্বে কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয় এবং ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহ-সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকেও সংবর্ধনা হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচিত সরকার ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় … কায়কোবাদ

৬২ বছর পরও ভাষা সৈনিক বরকত এর ‘আহ’ শব্দটা আমাকে কাঁদায়—ভাষা সৈনিক ড. জসিম উদ্দিন

আপডেট সময় ০২:২১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বেলা ১০টা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্ররা যখন ছোট ছোট দলে মেকিলে কলেজ হোস্টেলের গেইট দিয়ে বাহির হতে চাইছিল তখন পুলিশ তাদেরকে আটক করে ট্রাকে তুলে। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করলে ছাত্ররাও ইটপাটকেল মারতে থাকে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে। কিছু বোঝার আগেই ৩জন পুলিশ হাঁটু গেড়ে বসে অনর্গল গুলি ছুড়তে থাকে। আমি, শাহজাহান ও আবুল বরকত রাস্তা থেকে দ্বিতীয় ব্যারাকটির বারান্দায় দাঁড়াই।

আমার ডান পাশে বরকত আর বাম পাশে শাহজাহান। মুহুর্তের মধ্যে ধপাস করে বরকত মেঝেতে পড়ে যায়। আমি আর শাহজাহান বরকতকে তুলার চেষ্টা করলাম। বরকতের ডান পায়ের উরুর গোড়ায় গুলি লাগে। ইস্ত্রি করা খাকী রংয়ের প্যান্টে গুলির ছিদ্র দিয়ে কলকল করে রক্ত বের হচ্ছে। সিমেন্টের বারান্দায় রক্তস্রোত বইছে। যখন তাকে তুলে ধরার চেষ্টার করলাম তখন বরকতের ‘আহ’ শব্দটি আমার কানের মধ্যে আসে।

৬২ বছর পরও যেশব্দটা আমাকে আজও কাঁদায়। বরকতের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে সেদিন রাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা। সেদিন আমার ও শাহজাহানের কাপড় বরকতের তাজা রক্তে সিক্ত হয়ে গিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার তিতাসে মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত, ভাষা সৈনিক, বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ও লেখক ড. জসিম উদ্দিন আহম্মেদ একথাগুলো বলেন।

উদীয়মান প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, টাকার মাদকতায় আজ নীতি ও নৈতিকতা বিলপ্তির পথে। দেশে অর্থনীতির উন্নয়ন হলেও সামাজিক অবক্ষয় সমাজে গেড়ে বসেছে। যা থেকে তোমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আল্লাহর প্রদত্ত রাস্তায় জীবনকে ধাবিত করতে হবে, জানি কষ্ট হবে তারপরও সৎপথে উপার্জনের পন্থা বের করতে হবে আর পিতা-মাতাকে সম্মান করতে হবে। তবেই তোমাদের সুন্দর জীবন গড়ে উঠবে।

মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি মোঃ আব্দুল হালিম সরকারের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুল গণি, এডভোকেট মোঃ নাজমুল হুদা, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মোঃ গাজী উল হক চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ কামরুল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, গাজীপুর খান হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান রবিন, মাতৃছায়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলী আকবর প্রমূখ।

আলোচনা সভার পূর্বে কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয় এবং ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহ-সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকেও সংবর্ধনা হয়।