ঢাকা ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব সংকটে তিতাস নদী রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে

আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

অদ্বৈত মল্লবর্মণের কালজয়ী সেই উপন্যাস ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রের বর্ণনার এই তিতাস এখন শুধুই ইতিহাস, শুধুই স্মৃতি। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খর¯্রােতা তিতাস নদী এবং এর শাখাগুলো এখন মুরাদনগরবাসীর দুঃখ। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নদীটি। বর্তমানে পানি শুকিয়ে নদীটি রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে। নদীতে পানি না থাকায় সেচের অভাবে হুমকিতে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো আবাদ।

স্থানীয় ভূমি দস্যূরা ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে দখল করে বিস্তীর্ণ নদীর বুকজুড়ে চলাচ্ছে বোরো ধানের চাষ। তাই, ধান চাষের অন্যতম আধারে পরিণত হয়েছে মুরাদনগর উপজেলা অঞ্চলে শুকিয়ে যাওয়া তিতাস নদী। এক সময়ের স্্েরাতস্বিনী তিতাস নদী নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। কালের বিবর্তনে দখল-দূষণ ও প্রতিবছর পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে তিতাস এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদীর কোনো কোনো স্থানে পলিমাটি জমে জেগেছে চর আবার কোথাও হাঁটু পানি রয়েছে। নদীর উপরের ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। মনে হয় নদীর কোনও অস্তিত্ব নেই। এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এক সময় লঞ্চের শব্দ আর বড় বড় পাল তোলা ণৌকার মাঝি-মাল্লাদের কন্ঠধ্বনিতে থাকত তিতাস পারের মানুষেরা। এখন ধারণ করছে এর ভিন্ন রূপ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী থেকে মুরাদনগর, হোমনা, নবীনগর, বাঞ্চারামপুর উপজেলার লোকজন  লঞ্চদিয়ে মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। তখন লঞ্চই ছিলো একমাত্র যাতায়াতের উপায়। লঞ্চ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে এলাকার মানুষ। তিতাস নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে তাও আস্তে আস্তে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে এলাকার জেলে সম্প্রদায়, বাঁচার তাগিদে অনেকে চলে গেছে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক ছলিম উদ্দিন জানান, কৃষি কাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদী পাড়ে বসবাসকারীরা। এছাড়া পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই জেলেদের। এতে নদী পাড়ের গ্রামের জেলেরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এলাকার জনগণের দাবি জরুরি ভিত্তিতে এই নদী খনন করা  হোক।

উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল জানায়, সারা বছরে এ উপজেলায় তিন প্রকারের ধান চাষ হয়। এর মধ্যে বোরো ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আউশ সাত হাজার ৫০০, রোপা আমন পাঁচ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। সর্বমোট ৩১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমি চাষ করেন কৃষক। এর মধ্যে সেচ ব্যবস্থার অভাবে উপজেলার সদর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। অথচ এক সময় তিতাস নদীর পানি ঐ এলাকার কৃষকদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতো।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

অস্তিত্ব সংকটে তিতাস নদী রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে

আপডেট সময় ১১:৩৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

অদ্বৈত মল্লবর্মণের কালজয়ী সেই উপন্যাস ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রের বর্ণনার এই তিতাস এখন শুধুই ইতিহাস, শুধুই স্মৃতি। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খর¯্রােতা তিতাস নদী এবং এর শাখাগুলো এখন মুরাদনগরবাসীর দুঃখ। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নদীটি। বর্তমানে পানি শুকিয়ে নদীটি রূপ নিয়েছে আবাদি জমিতে। নদীতে পানি না থাকায় সেচের অভাবে হুমকিতে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো আবাদ।

স্থানীয় ভূমি দস্যূরা ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে দখল করে বিস্তীর্ণ নদীর বুকজুড়ে চলাচ্ছে বোরো ধানের চাষ। তাই, ধান চাষের অন্যতম আধারে পরিণত হয়েছে মুরাদনগর উপজেলা অঞ্চলে শুকিয়ে যাওয়া তিতাস নদী। এক সময়ের স্্েরাতস্বিনী তিতাস নদী নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। কালের বিবর্তনে দখল-দূষণ ও প্রতিবছর পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে তিতাস এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদীর কোনো কোনো স্থানে পলিমাটি জমে জেগেছে চর আবার কোথাও হাঁটু পানি রয়েছে। নদীর উপরের ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। মনে হয় নদীর কোনও অস্তিত্ব নেই। এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এক সময় লঞ্চের শব্দ আর বড় বড় পাল তোলা ণৌকার মাঝি-মাল্লাদের কন্ঠধ্বনিতে থাকত তিতাস পারের মানুষেরা। এখন ধারণ করছে এর ভিন্ন রূপ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী থেকে মুরাদনগর, হোমনা, নবীনগর, বাঞ্চারামপুর উপজেলার লোকজন  লঞ্চদিয়ে মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। তখন লঞ্চই ছিলো একমাত্র যাতায়াতের উপায়। লঞ্চ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে এলাকার মানুষ। তিতাস নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে তাও আস্তে আস্তে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে এলাকার জেলে সম্প্রদায়, বাঁচার তাগিদে অনেকে চলে গেছে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক ছলিম উদ্দিন জানান, কৃষি কাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদী পাড়ে বসবাসকারীরা। এছাড়া পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই জেলেদের। এতে নদী পাড়ের গ্রামের জেলেরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এলাকার জনগণের দাবি জরুরি ভিত্তিতে এই নদী খনন করা  হোক।

উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল জানায়, সারা বছরে এ উপজেলায় তিন প্রকারের ধান চাষ হয়। এর মধ্যে বোরো ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আউশ সাত হাজার ৫০০, রোপা আমন পাঁচ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। সর্বমোট ৩১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমি চাষ করেন কৃষক। এর মধ্যে সেচ ব্যবস্থার অভাবে উপজেলার সদর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। অথচ এক সময় তিতাস নদীর পানি ঐ এলাকার কৃষকদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতো।