তথ্যপ্রযুক্তি :
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের (আইসিসি) মাধ্যমে লেনদেনের জটিলতার বিষয়টি শিথিল করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
কার্ডে লেনদেনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নজরে আসায় তিনি এটির সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন পলক। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হবে বলে এক ফেসবুক পোস্টে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক নির্দেশনায় দেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক ব্যাংক কার্ডে লেনদেন বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে। এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ফিল্যান্সররা। এ নির্দেশনায় দেশের ভেতরে আন্তর্জাতিক বা প্রিপেইড কার্ডে আগের মতো কেনাকাটার সুযোগ বন্ধ করা হয়।
কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে অবৈধ বিভিন্ন পেমেন্ট যেমন- অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও লটারির টিকিট কেনার কাজে এ কার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়।
তবে অসাধু ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মীরা। কেননা আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে তাদের ডোমেইন কেনা, সার্ভার বিল পরিশোধ, অ্যাপ কেনাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় কেনাকাটা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন পলক। কড়াকড়ি শিথিল হলে তা তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে ফিল্যান্সারদের বিড়ম্বনা কমাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী শুক্রবার রাতে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে আমাদের অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার ও আইটি সেক্টরের সাথে জড়িত অনেকেই বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়টি আর্কিটেক্ট অফ ডিজিটাল বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের নজরে আসে এবং তিনি এটি দ্রুত সমাধান করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে নির্দেশনা প্রদান করেন। আশা করছি ফ্রিল্যান্সারদের কল্যাণে এবং আইটি সেক্টরের প্রসারে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কড়াকড়ি শিথিল করা হবে।’
২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক পণ্য কেনাকাটায় আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড (আইসিসি) ব্যবহারকারী গ্রাহকদের এককভাবে কোনো পণ্য বা সেবামূল্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বছরে তা কোনো অবস্থাতেই ১ হাজার ডলারের বেশি হবে না। এতদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থে এমন কেনাকাটা করা গেলেও সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার গ্রাহকদের জানানো হয়েছে এমন সুবিধা আর দেয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
এমন সঙ্কট সমাধানে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীবের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল।
গত রবিবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর এমন পদক্ষেপ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা না রেখে বরং ব্যবসায়িক পরিবেশ নষ্ট করে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করবে বলে তুলে ধরেন বেসিস প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশের চালিকা শক্তি এই প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ বলেও তুলে ধরেন তারা।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বেসিসের প্রস্তাবনা শোনেন। আগামী সপ্তাহে ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিলেন।