আশিকুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস ও ডোল ভাঙ্গা নদে বাঁশের বেড়া দিয়ে জাল পেতে অবৈধভাবে মাছ ধরা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদের ডোল ভাঙ্গা নদিতে অন্তত ৬০/৭০টি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ও জাল পেতে অবৈধভাবে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে এই নৌপথে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার এর সাথে মোঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন,নদীতে জালের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা ঠিকনা তবে অবৈধ। তিতাস ও ডোল ভাঙ্গা নদের অনেক জায়গায় অবৈধভাবে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছে কিছু লোকজন। অতীতে আমরা অভিযান চালিয়ে জাল উচ্ছেদ করেছি। এবারও শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’
বাঞ্ছারামপুরের জয়কালীপুর এলাকায় মেঘনা নদী থেকে তিতাস নদের উৎপত্তি। এটি উপজেলার তেজখালী, ফরদাবাদ, ছলিমাবাদ, দরিয়াদৌলত, বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা ও উজানচর ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম দিয়ে বয়ে গেছে। প্রায় ৪৫ কিলোমিটারের এ নদি উজানচর ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে।ডোল ভাঙ্গা নিতেও এভাবেই জাল দিয়ে বেড়া আটকিয়ে মাছ ধরছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিতাস ও ডোল ভাঙ্গা নদের অন্তত ৬০/৭০টি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ভৈরবজাল বেঁধে পোনাসহ ছোট-বড় মাছ শিকার করছেন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে এ নৌপথে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মূলত মেঘনা নদী থেকে যারা ভোলগেট করে বালু নিয়ে আসে, তারা সমস্যায় পড়ছে বেশি।
গত রোববার নদের বিভিন্ন এলাকায় যান এ প্রতিবেদক। তখন আসাদনগর গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে এবং সাহেবনগর গ্রামের উত্তর দিকে নদের এক কিলোমিটারে ছয়টি বেড়াসহ জাল দেখতে পাওয়া যায়।
সাহেবনগর-আসাদনগর এলাকায় তিতাস নদের মোড়ে বেড়ায় পাতা একটি জালে মাছ ধরছিলেন শ্রমিক ইদ্রিছ মিয়া ও রুবেল মিয়া। ইদ্রিছ মিয়া বলেন, ‘এক মাস আগে ভৈরবজাল নদীতে পাতা অইছে, এখনো বেশি মাছ ধরা পড়তাছে না। কিছুদিন পরে নদীর পানি কমলে মাছ বেশি ধরা পড়বে। ছোড মাছও আয়ে জালে। এই ছোড জায়গায় সাহেবনগর গ্রামের হোসেন মিয়া, দুলাল মিয়া, জোগেশ দাস, খলিল মিয়া, মাতু মিয়া ভৈরবজাল পাইতা মাছ ধরতাছে।’
সাহেবনগর গ্রামে গিয়ে মাতু মিয়াকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ছেলে মো. হাফেজের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর ভাষ্য, জালে বর্তমানে বেশি মাছ ধরা পড়ে না। নদের পানি কমলে ও রোদ উঠলে মাছ বেশি ধরা পড়বে। আর এভাবে আড়াআড়ি জাল পেতে মাছ ধরা যে বেআইনি, সেটা তাঁদের জানা নেই। তবে কেউ জাল পাততে বাধা দেয়নি।
একই ভাষ্য সাহেবনগর গ্রামের মৃত হোসেন মিয়ার স্ত্রী আনু বেগমেরও। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী এইখানে ৩৫ বছর ধইরা জাল দিয়া মাছ ধরেছে, কেউ কোনো দিন কিছু কয় নাই। আমার স্বামী মইরা যাওনের পর থেকে আমিই এই জায়গায় জাল দিয়া মাছ ধরতাছি।’
এলাকাবাসী বলছেন, প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাস নদি থেকে বর্ষার পানি নেমে যায়। এ সময়ে নদের বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে জাল ফেলা হয়। নদীতে আড়া আড়িভাবে ২০০-৩০০ ফুট লম্বা বেড়ায় জাল পাতা হয়। এই বেড়ার এক প্রান্তে ১৫-২০ ফুট পরপর বাঁশের মাচা করে লম্বা বাঁশ দিয়ে নদির তলদেশে জাল পাতা হয়। প্রতিটি জালে ১৫-২০ জন শ্রমিক মাছ ধরার কাজ করেন। বছরের পর বছর এভাবে নদির বিভিন্ন স্থানে বেড়া দিয়ে জাল ফেলে মাছ শিকার করলেও প্রশাসনের লোকজন কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে এ নৌপথে চলাচলের সময় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
আসাদনগর গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, আসাদনগর-সাহেবনগর গ্রামের মোড়ে তিতাস নদে অন্তত সাতটি ভৈরবজাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে। অনেক সময় নৌকা এসব জালে আটকে যায়। তখন জালের মালিকেরা নৌকার লোকজনকে মারধর করেন। পাশাপাশি এসব জালে পোনা মাছও আটকা পড়ছে। ফলে নদীতে মাছের বংশবৃদ্ধি বিঘ্নিত হচ্ছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ ও থানার পূর্ব দিকে ২০০ মিটারের মধ্যে ২টি, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের পূর্ব দিকে ১টি জাল আড়া আড়ি পেতে রাখতে দেখা যায়। এ ছাড়া মধ্যনগর সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় ৩টি, ফরদাবাদ ও পূর্বহাটি এলাকায় চার কিলোমিটার এলাকায় ২০টি ভৈরবজাল রয়েছে। বুধাইরকান্দি, রাধানগর ও কালিকাপুর এলাকার তিন কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১৫টি ভৈরবজাল ফেলা হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে বেড়া দিয়ে কোনোভাবেই যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। নদীতে নৌকা চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা অপরাধ। আমি ২ অক্টোবর বাঞ্ছারামপুরে যোগদান করেছি। মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়ে শিগগিরই এসব অবৈধ বেড়া ও জাল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করব।’