সুমন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ কাঁচা ও মুদি মালের বাজারের প্রায় এক কিলোমিটারের রাস্তার বেহাল দশায় নাকাল ওই বাজারের হাজার হাজার ক্রেতা ও বিক্রেতারা। গত পাচঁ বছর ধরে চলছে এমন অবস্থা। এরই মধ্যে ড্রেন নির্মান কাজ যেন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ড্রেন নির্মাণের নামে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক বৃষ্টিতে এই বাজারের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিত আরো চরমে উঠেছে। মাটি খুঁরাখুরির কাজ ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও নেই কাজের কোন অগ্রগতি। অপর দিকে কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুতই এ ড্রেনের কাজ শেষ করা হবে। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ি ও ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিজেই বণিক সমিতির আহ্বায়ক আবার নিজেই ড্রেন নির্মাণেরে ঠিকাদার হওয়ায় কাজের গুনগত মান নিয়েও সন্দিহান রয়েছে ব্যাবসায়ীদের মাঝে।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৫টাকা ব্যয়ে ২১৮মিটার ড্রেন নির্মানের কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস নাজমুল হাছান এন্টার প্রাইজ। পরে সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজটি নিয়ে নেয় এ বাজার বনিক সমিতির আহব্বায়ক চন্দন বনিক। ড্রেন নির্মান কাজের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও তা আবার সময় বাড়িয়ে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। তবে দ্বিতীয় বারের মতো নির্ধারিত সময়ের পর কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, এ উপজেলাসহ আশপাশের ৬টি উপজেলার ব্যবসায়িক প্রানকেন্দ কোম্পানীগঞ্জ বাজার। বৃহত্তম এই পাইকারি বাজার থেকে মালামাল ক্রয় করে পাইকাররা নিয়ে যায় এ উপজেলার আশপাশের ৬টি উপজেলায়। তাছাড়া সাপ্তাহিক রোবার ও বৃহস্পতিবার থাকে এ বাজারে নির্ধারিত হাট তখন এ বাজারে ক্রেতা সমাগম বেড়ে যায় দশগুন বেশি। তাছাড়া সপ্তাহের সব দিনই থাকে ক্রেতা ও পাইকারদের বিপুল সমাগম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক থেকে গোমতি নদী বেরীবাধ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে বাজারের দুপাশের গলির মাঝ বরাবর মাটি খুঁড়ে রাস্তার মাঝখানে রাখা হয়। এত করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদেরে ভিড় ও ভোগান্তী ছিল নিত্যসঙ্গী। গত ৩মাস পূর্বে থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এ বাণিজ্যিক এলাকায় নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। এমন এক ব্যস্ততম বাজারে ড্রেনের কাজ খুঁড়িয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় সবাইকে ঝুঁকি নিয়ে ড্রেনের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ বাজারের গলি দিয়ে রিকশাসহ কোনো যান চলাচল করতে পারছে না।
ফারুক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এ বাজারে রোজার ঈদের আগে ড্রেন নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে কর্তৃপক্ষ। যার কারনে দুই ঈদেও কাঙ্খিত ক্রেতা মেলে নি আমাদের। ৩মাস পার হলেও এই মূর্হতে ও ধীরগতিতে কাজ চলায় ভোগান্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। তিনি বলেন, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, নবীনগর, বুড়িচংসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ বাজার সবচেয়ে বড়। এ বাজাওে প্রশাসন সহ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেওয়া দরকার।
ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, এমনিতেই লকডাউনে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারপর এখন আবার ড্রেন নির্মাণের ধীরগতির কারণে এ এলাকায় প্রতিনিয়ত লেগে থাকছে যানজট। যে কারণে বাজারে আগত সকল ক্রেতা-বিক্রেতা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত যেন এ কাজটি সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির আহ্বায়ক চন্দন বণিক ড্রেন নির্মান কাজ নিজে করার কথা স্বীকার করে বলেন, বৃষ্টির কারনে কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাজারের নানা সমস্যার কারনে এ কাজের যে মুল কন্ট্রাক্টর সে পালিয়ে গেছে। এ কারনে বাজারের উন্নয়নের কথা ভেবে আমাকে কাজটি করতে হচ্ছে। রাতের বেলায় কাজ করার কারনে কাজটি দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজমুল হাছান সত্ত্বাধিকারী নাজমুল হাছান বলেন, কাজটি আমি বনিক সমিতির আহব্বায়ক চন্দন বনিককে দিয়ে দিয়েছি। চলতি মাসে কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে আমরা আবার নতুন করে সময় বাড়িয়েছি। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ব্যবসায়ীরা কাজের সময় তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ড্রেন নির্মানে বিলম্ব হচ্ছে। ড্রেনের নিচের বেইস ডালাইয়ের কাজটি শেষ করা হলেই দ্রুত ড্রেন নির্মান কাজ শেষ হবে।