মো: নাজিম উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি:
২২ মে ২০১৫ ইং (মুরাদনগর বার্তা ডটকম)
মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে এসেছিলেন। বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে আসেন কবি। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান।
এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আগামী ২৫ মে সোমবার থেকে কবির ১১৬তম জন্মবার্ষিকী পালন শুরু হবে।
মুরাদনগরের কো¤পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্কিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খাঁনবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না কোন সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।
জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। অযন্ত ও অবহেলার কারনে সে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে এখন তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসরখাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরি মোনালিসা খান বলেন, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন সাদামাটাভাবে অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটির সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হোক।
রাজনীতিক ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কো¤পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করতে চাই। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত বাঙ্গরা থানা নজরুল-নার্গিস’র নামে করার উদ্যোগ নিয়ে মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র সাধারন সম্পাদক সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ, মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল, উপজেলা নজরুল নার্গিস স্মৃতি রক্ষা ফাউন্ডেশনের আহবায়ক মো: হুমায়ন কবির খান, নাঈম সরকার ও শেখ সজীব ওয়াজেদ জয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো: গিয়াস উদ্দিন আল মাসুদের নেতৃত্বে স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ্যে চলতি বছরের গত ১৯ মে মুরাদনগরের উত্তরের জন্য প্রস্তাবিত নতুন থানার নামকরনের দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে।
নজরুল জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আগামী ২৫ মে থেকে: আগামী ২৫ মে সোমবার থেকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী ১১৬তম নজরুল জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান। মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিকেল পাঁচটায় ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (এফসিএ)। এতে দেশের নামকরা নজরুল গবেষক ও শিল্পীরা উপস্থিত থাকবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।