ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য দিশেহারা শিক্ষার্থী অভিভাবক

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

শিক্ষার্থীরা শেখা বা লেখা পড়ার জন্য আর স্কুল কলেজে যেতে হয়না। যায় শুধু হাজিরা ও শিক্ষার্থী হিসেবে তালিকায় নাম থাকার জন্য। পড়া, শেখা ও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের সৃষ্ট প্রাইভেট হোমে সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকাভ ছোটে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদানে। বিষয়টি ব্যতিক্রম মনে হলেও বাস্তব চিত্র কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়।

এতে করে শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রমের অপচয়ের পাশাপাশি অভিভাবকদের গচ্ছা দিতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সন্তানদেরকে স্কুলের চেয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতে বাধ্য হয়। সারাদেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ চালালেও এর কোন প্রভাব এ উপজেলায় না পরায় বহাল তবিয়তে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং হোমে।

২০১২ সালের ২০ জুন প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়- সরকারি ও এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা বিদ্যালয় বা নিজের বাড়িতে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। কিন্তু সরকারি ওই নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রকাশ্যে বাসা অথবা সেন্টারে চালু রেখেছেন কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ফি দেওয়ার বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ক্লাস করতে পারবে এ সুযোগের ফায়দা লুটছেন তারা। একই দশা গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ভোরের আলো ফুটতে নাফুটতেই কয়েক কিলোমিটার দূরের কোচিং-এ পড়তে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপজেলার সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা কোচিং বাণিজ্য। অধিকাংশ শিক্ষক নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন বিকল্প বানীজ্যিক স্কুল ও প্রাইভেট সেন্টার। উপজেলা সদরে কোচিং হোমে সয়লাব হয়ে গেছে। সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং হোম। উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের কোন না কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও  উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা প্রাইভেট ও কোচিং নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি রুমে ১ ঘন্টার কোচিংয়ে ৩০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ সেখানে নেই বললেই চলে। দায়সারা গোছের পাঠদান হচ্ছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘন্টা করে মাসে ১২ থেকে ১৬ দিন তাদের পড়ানো হয়। কেউ কেউ সপ্তাহে তিন দিনের বেশি পড়াতে রাজি নয়। কোচিং ফি বাবদ মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে তাদের। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতাও। কেন কোচিং করছো, জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষার্থীরা বলে, ‘কি করবো কোচিংয়ে না পরলে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে! ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না।’ আবার কিছু শিক্ষক আছেন যাদের কাছে কোচিং করলে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। কোচিং নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বেড়ে চলছে বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ক্লাসে তো আর সব পড়ানো হয় না। বাধ্য হয়েই ছেলে-মেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে যার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষকদের প্রাইভেট ও নম্বর বাণিজ্যের কারণে প্রকৃত মেধার মূল্যায়নও হচ্ছে না। যে শিক্ষক ভোর ছয়টা থেকে শ্রেণি কক্ষে পাঠ দানের পূর্ব পর্যন্ত একটানা প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্বে থাকেন, তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মনযোগ সহকারে পাঠদান করাতে পারেন এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন অভিভাবক মহল বেশ চিন্তিত। অনেক ছাত্র প্রাইভেট পড়তে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থমকে যাচ্ছে বলেও জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর কোন প্রকার সুযোগ নেই। শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের সুযোগ রয়েছে, সেটি অভিভাবক এবং ম্যানিজিং কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে স্কুল ছুটির আগে অথবা পড়ে যার যার শ্রেণিকক্ষে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে কোচিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সহসা পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাহী আদেশে সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ এর মামলা প্রত্যাহারে দাবি  হেফাজতে ইসলামের

মুরাদনগরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য দিশেহারা শিক্ষার্থী অভিভাবক

আপডেট সময় ১২:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

শিক্ষার্থীরা শেখা বা লেখা পড়ার জন্য আর স্কুল কলেজে যেতে হয়না। যায় শুধু হাজিরা ও শিক্ষার্থী হিসেবে তালিকায় নাম থাকার জন্য। পড়া, শেখা ও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের সৃষ্ট প্রাইভেট হোমে সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকাভ ছোটে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদানে। বিষয়টি ব্যতিক্রম মনে হলেও বাস্তব চিত্র কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়।

এতে করে শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রমের অপচয়ের পাশাপাশি অভিভাবকদের গচ্ছা দিতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সন্তানদেরকে স্কুলের চেয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতে বাধ্য হয়। সারাদেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ চালালেও এর কোন প্রভাব এ উপজেলায় না পরায় বহাল তবিয়তে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং হোমে।

২০১২ সালের ২০ জুন প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়- সরকারি ও এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা বিদ্যালয় বা নিজের বাড়িতে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। কিন্তু সরকারি ওই নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রকাশ্যে বাসা অথবা সেন্টারে চালু রেখেছেন কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ফি দেওয়ার বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ক্লাস করতে পারবে এ সুযোগের ফায়দা লুটছেন তারা। একই দশা গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ভোরের আলো ফুটতে নাফুটতেই কয়েক কিলোমিটার দূরের কোচিং-এ পড়তে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপজেলার সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা কোচিং বাণিজ্য। অধিকাংশ শিক্ষক নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন বিকল্প বানীজ্যিক স্কুল ও প্রাইভেট সেন্টার। উপজেলা সদরে কোচিং হোমে সয়লাব হয়ে গেছে। সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং হোম। উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের কোন না কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও  উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা প্রাইভেট ও কোচিং নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি রুমে ১ ঘন্টার কোচিংয়ে ৩০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ সেখানে নেই বললেই চলে। দায়সারা গোছের পাঠদান হচ্ছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘন্টা করে মাসে ১২ থেকে ১৬ দিন তাদের পড়ানো হয়। কেউ কেউ সপ্তাহে তিন দিনের বেশি পড়াতে রাজি নয়। কোচিং ফি বাবদ মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে তাদের। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতাও। কেন কোচিং করছো, জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষার্থীরা বলে, ‘কি করবো কোচিংয়ে না পরলে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে! ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না।’ আবার কিছু শিক্ষক আছেন যাদের কাছে কোচিং করলে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। কোচিং নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বেড়ে চলছে বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ক্লাসে তো আর সব পড়ানো হয় না। বাধ্য হয়েই ছেলে-মেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে যার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষকদের প্রাইভেট ও নম্বর বাণিজ্যের কারণে প্রকৃত মেধার মূল্যায়নও হচ্ছে না। যে শিক্ষক ভোর ছয়টা থেকে শ্রেণি কক্ষে পাঠ দানের পূর্ব পর্যন্ত একটানা প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্বে থাকেন, তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মনযোগ সহকারে পাঠদান করাতে পারেন এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন অভিভাবক মহল বেশ চিন্তিত। অনেক ছাত্র প্রাইভেট পড়তে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থমকে যাচ্ছে বলেও জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর কোন প্রকার সুযোগ নেই। শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের সুযোগ রয়েছে, সেটি অভিভাবক এবং ম্যানিজিং কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে স্কুল ছুটির আগে অথবা পড়ে যার যার শ্রেণিকক্ষে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে কোচিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সহসা পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।