ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগর উপজেলার নির্বাচিত চার জয়িতার সফল হওয়ার গল্প…

মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সংগ্রামী চার জয়িতার সফল হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক দুঃখ কষ্টের কাহিনী। কেউ অর্থনীতিতে, শিক্ষা ও চাকুরী, জননী নারী, নির্যাতন ও সমাজ উন্নায়নের ক্ষেত্রে নিজেকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। উপজেলায় নির্বাাচিত চার জয়িতাদের মধ্যে এক জন জেলা প্রর্যায়ে শেষ্ঠ হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ১০ জনের মধ্যে একজন হয়েছেন।

শিক্ষা ও চাকুরীরতে সাফল্য অর্জনকারী শিমুলী আক্তার

শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফর‌্য অর্জনকারী নারী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের উড়ীশ^র গ্রামের মৃত্যু কামরুজ্জামানের স্ত্রী শিমুলী আক্তার। শিমুলী আক্তার জানান, একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারে জন্ম আমার। ছয় ভাই একমাত্র বোন আমি। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ছোট কাল থেকেই আমি ছিলাম খুবই চঞ্চলাবতী ও লেখা পড়ায় আগ্রহী। নবম শ্রেনীতে শ্রেনীতে উত্তীর্ন হওয়ার পরই পরিবারের কারনে আমি বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হই। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবো ইচ্ছা থাকলেও স্বামী বেকার হওয়ায় স্বামী লেখা পড়া শিক্ষাঢনি।এসএসসি পরীক্ষা দেওেয়ার সময় স্বামী, ভাই ও বাবার কাছে টাকা চাইলে তারা বলের বিয়ে হয়ে গেছে আর লেখা পড়া করতে হবে না। নিরুপায় হয়ে একটি এনজিওর একটি স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়াতে শুরু করি। আর সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি ও মাস্টার্স পাশ করি। এনজিওতে শিক্ষাকতা আর প্রাইভেটের টাকা দিয়ে আমার লেখা পড়া ও সংসার চালাতে হতো। এরই মাঝে একটি ছেলে সন্তানের জননী হই। পরে পুষ্টি প্রোগ্রামে চাকুরি নেই। সন্তান লালন পালন ও সংসার গুছিয়ে মাস্টার্স পাশ করতে আমার সীমাহিন কষ্ট করতে হয়েছে। স্বামী বেকার থাকায় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। হঠাৎ করে গত বছরের আগস্ট মাসে স্বামীর মৃত্যু হয়। তাতে নিজে ভেঙ্গে না পড়ে সন্তান নিয়ে চাকুরি করছি। চেষ্টা থাকলে মানুষ অনেক কিছু করতে পাওে বলে আমার বিশ^াস। যা আমার নিজের জীবন থেকে শিখেছি।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে কাজ করছেন ববিতা বেগম

নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে কাজ করছেন উপজেলার বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে ববিতা আক্তার। সে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হয়ে বিভাগীয় পর্যায়েও ১০ জনের মধ্যে একজন হয়েছে। স্বপ্না আক্তার জানান, অষ্টম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা আমাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর জানতে পারি স্বামী নিজ গ্রামের এক মেয়ের সাথে প্রেম ছিল এবং বিয়ের পরও সম্পর্ক অব্যাহত ছিল তার। আর সেই সম্পের্তেও কারনে আমাকে সবসময় মারধর করত। এরই মধ্যে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর সেই নির্যাতনের মাত্রা আরো বেরে যায়। নির্যাতন সইতে না পেরে ৩ মাসের সন্তানকে নিয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। তারপর স্বামী আমার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করে সন্তানটিকে নিয়ে যায়। সন্তান হারিয়ে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে একটি এনজিওতে চাকুরী নেই।  প্রায় দুই বছর পর মা-বাবা জোর করে আমাকে গ্রামের এক ছেলের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। বিয়ের পর নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখি যে আমাকে সাবলম্বী হতে হবে। সে জন্য নতুন করে লেখাপড়া শুরু করি। পাশাপাশি গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে শুরু করি। আর তা থেকে যা আয় করতাম তা দিয়ে দৌলতপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ২০১১ সালে দাখিল ও ২০১৩ সালে আলিম পাশ করি। বর্তমানে আমি অর্নাস চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। এরই মধ্যে আমার দুই ছেলে সন্তান জন্ম হয়। লেখা পড়ার পাশাপাশি সেলাই কাজ কওে সংসার ও আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।

সফল জননী নারী আনোয়ারা বেগম

সফল জননী নারী উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভুবনঘর গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়াল সরকারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেনি পাশ করার পরই মা-বাবা আমাকে বিয়ে দেয়। নাবালক এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জন্মের পর তার স্বামীর মৃত্যু হয়। স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া সংসার চালানোর মতো কিছুই না থাকায় সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া করানো নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। নিজে লেখাপড়া করতে পাড়িনি তাই স্বপ্ন ছিল সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। এরই মধ্যে নানা জনে নানা কথা বলা শুরু করেছে আমাকে নিয়ে। স্বামীর মৃতুর পর দরিদ্রতার মাধে জীবন যাপন সত্ত্বেও আমার মনোবল কখনও ভাঙ্গেনি। দারিদ্রতা আর লোকজনের নানান কথাকে উপেক্ষা করে লড়াই করা শুরু করি। হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন, কাথা সেলাই ও ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। শত প্রতিকূলতা ও দারিদ্র্যের সাথে  আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার (কম্পিউটার) পাশ করে বিদেশে চাকুরি করছে। বড় মেয়ে মাষ্টার্স পাস কওে এশটি স্কুলে শিক্ষাকতা করছে। ছোট মেয়ে ডিগ্রিতে লেখাপড়া করছে। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে মানুষের উন্নয়নের কাজ করার আশা করছি। আমি শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে অদম্য ইচ্ছা ও মনোবলের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে পেরে আমি গর্বিত।

অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী খোরশেদা আক্তার

অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের ফুল মিয়ার স্ত্রী খোরশেদা বেগম। খোরশেদা বেগম জানান, বাবা বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। দুই সন্তানসহ চার জনের সংসার চালাতে খুব হিমশিম পেতে হতো। এমকি না খেয়ে কাটাতে হযেছে দিনের পর দিন। সংসার চালাতে পরে একটি এনজিওতে চাকুরি নেই। অল্প বেতনে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারতাম না। তখনই সেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠাই।  আমার ও স্বামীর উপার্জনের টাকা দিয়ে একটি ডুকুর ক্রয় করি। পরে চাকুরি ছেরে মৎস চাষের প্রশিক্ষন নিয়ে সেই পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পাশাপাশি এলাকার দুঃস্থ লোকদের প্রশিক্ষণ দেই। এতে করেই আস্তে আস্তে আমার অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। বর্তমানে আমার ৩টি পুকুর রয়েছে। এখন আমার মাসি আয় ২০/২৫ হাজার টাকা। সংসারে আর কোন প্রকার সমস্যা নেই। এখন আমি ও স্বামী সংসার নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করেছি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

মুরাদনগর উপজেলার নির্বাচিত চার জয়িতার সফল হওয়ার গল্প…

আপডেট সময় ০৪:৪৫:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সংগ্রামী চার জয়িতার সফল হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক দুঃখ কষ্টের কাহিনী। কেউ অর্থনীতিতে, শিক্ষা ও চাকুরী, জননী নারী, নির্যাতন ও সমাজ উন্নায়নের ক্ষেত্রে নিজেকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। উপজেলায় নির্বাাচিত চার জয়িতাদের মধ্যে এক জন জেলা প্রর্যায়ে শেষ্ঠ হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ১০ জনের মধ্যে একজন হয়েছেন।

শিক্ষা ও চাকুরীরতে সাফল্য অর্জনকারী শিমুলী আক্তার

শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফর‌্য অর্জনকারী নারী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের উড়ীশ^র গ্রামের মৃত্যু কামরুজ্জামানের স্ত্রী শিমুলী আক্তার। শিমুলী আক্তার জানান, একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারে জন্ম আমার। ছয় ভাই একমাত্র বোন আমি। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ছোট কাল থেকেই আমি ছিলাম খুবই চঞ্চলাবতী ও লেখা পড়ায় আগ্রহী। নবম শ্রেনীতে শ্রেনীতে উত্তীর্ন হওয়ার পরই পরিবারের কারনে আমি বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হই। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবো ইচ্ছা থাকলেও স্বামী বেকার হওয়ায় স্বামী লেখা পড়া শিক্ষাঢনি।এসএসসি পরীক্ষা দেওেয়ার সময় স্বামী, ভাই ও বাবার কাছে টাকা চাইলে তারা বলের বিয়ে হয়ে গেছে আর লেখা পড়া করতে হবে না। নিরুপায় হয়ে একটি এনজিওর একটি স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়াতে শুরু করি। আর সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি ও মাস্টার্স পাশ করি। এনজিওতে শিক্ষাকতা আর প্রাইভেটের টাকা দিয়ে আমার লেখা পড়া ও সংসার চালাতে হতো। এরই মাঝে একটি ছেলে সন্তানের জননী হই। পরে পুষ্টি প্রোগ্রামে চাকুরি নেই। সন্তান লালন পালন ও সংসার গুছিয়ে মাস্টার্স পাশ করতে আমার সীমাহিন কষ্ট করতে হয়েছে। স্বামী বেকার থাকায় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। হঠাৎ করে গত বছরের আগস্ট মাসে স্বামীর মৃত্যু হয়। তাতে নিজে ভেঙ্গে না পড়ে সন্তান নিয়ে চাকুরি করছি। চেষ্টা থাকলে মানুষ অনেক কিছু করতে পাওে বলে আমার বিশ^াস। যা আমার নিজের জীবন থেকে শিখেছি।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে কাজ করছেন ববিতা বেগম

নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে কাজ করছেন উপজেলার বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে ববিতা আক্তার। সে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হয়ে বিভাগীয় পর্যায়েও ১০ জনের মধ্যে একজন হয়েছে। স্বপ্না আক্তার জানান, অষ্টম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা আমাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর জানতে পারি স্বামী নিজ গ্রামের এক মেয়ের সাথে প্রেম ছিল এবং বিয়ের পরও সম্পর্ক অব্যাহত ছিল তার। আর সেই সম্পের্তেও কারনে আমাকে সবসময় মারধর করত। এরই মধ্যে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর সেই নির্যাতনের মাত্রা আরো বেরে যায়। নির্যাতন সইতে না পেরে ৩ মাসের সন্তানকে নিয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। তারপর স্বামী আমার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করে সন্তানটিকে নিয়ে যায়। সন্তান হারিয়ে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে একটি এনজিওতে চাকুরী নেই।  প্রায় দুই বছর পর মা-বাবা জোর করে আমাকে গ্রামের এক ছেলের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। বিয়ের পর নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখি যে আমাকে সাবলম্বী হতে হবে। সে জন্য নতুন করে লেখাপড়া শুরু করি। পাশাপাশি গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে শুরু করি। আর তা থেকে যা আয় করতাম তা দিয়ে দৌলতপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ২০১১ সালে দাখিল ও ২০১৩ সালে আলিম পাশ করি। বর্তমানে আমি অর্নাস চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। এরই মধ্যে আমার দুই ছেলে সন্তান জন্ম হয়। লেখা পড়ার পাশাপাশি সেলাই কাজ কওে সংসার ও আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।

সফল জননী নারী আনোয়ারা বেগম

সফল জননী নারী উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভুবনঘর গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়াল সরকারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেনি পাশ করার পরই মা-বাবা আমাকে বিয়ে দেয়। নাবালক এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জন্মের পর তার স্বামীর মৃত্যু হয়। স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া সংসার চালানোর মতো কিছুই না থাকায় সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া করানো নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। নিজে লেখাপড়া করতে পাড়িনি তাই স্বপ্ন ছিল সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। এরই মধ্যে নানা জনে নানা কথা বলা শুরু করেছে আমাকে নিয়ে। স্বামীর মৃতুর পর দরিদ্রতার মাধে জীবন যাপন সত্ত্বেও আমার মনোবল কখনও ভাঙ্গেনি। দারিদ্রতা আর লোকজনের নানান কথাকে উপেক্ষা করে লড়াই করা শুরু করি। হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন, কাথা সেলাই ও ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। শত প্রতিকূলতা ও দারিদ্র্যের সাথে  আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার (কম্পিউটার) পাশ করে বিদেশে চাকুরি করছে। বড় মেয়ে মাষ্টার্স পাস কওে এশটি স্কুলে শিক্ষাকতা করছে। ছোট মেয়ে ডিগ্রিতে লেখাপড়া করছে। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে মানুষের উন্নয়নের কাজ করার আশা করছি। আমি শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে অদম্য ইচ্ছা ও মনোবলের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে পেরে আমি গর্বিত।

অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী খোরশেদা আক্তার

অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের ফুল মিয়ার স্ত্রী খোরশেদা বেগম। খোরশেদা বেগম জানান, বাবা বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। দুই সন্তানসহ চার জনের সংসার চালাতে খুব হিমশিম পেতে হতো। এমকি না খেয়ে কাটাতে হযেছে দিনের পর দিন। সংসার চালাতে পরে একটি এনজিওতে চাকুরি নেই। অল্প বেতনে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারতাম না। তখনই সেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠাই।  আমার ও স্বামীর উপার্জনের টাকা দিয়ে একটি ডুকুর ক্রয় করি। পরে চাকুরি ছেরে মৎস চাষের প্রশিক্ষন নিয়ে সেই পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পাশাপাশি এলাকার দুঃস্থ লোকদের প্রশিক্ষণ দেই। এতে করেই আস্তে আস্তে আমার অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। বর্তমানে আমার ৩টি পুকুর রয়েছে। এখন আমার মাসি আয় ২০/২৫ হাজার টাকা। সংসারে আর কোন প্রকার সমস্যা নেই। এখন আমি ও স্বামী সংসার নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করেছি।