মো. আবু রায়হান চৌধুরী, হোমনা (কুমিল্লা) থেকেঃ
কুমিল্লার হোমনায় সরকারি সম্পত্তি নিজের দাবি করে সরকারি গাছ কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট হতে কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়েই ১০টি গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেখ ফরিদ ওরফে সেকান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
কে এই শেখ ফরিদ ওরফে সেকান?
সেকান উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের ভিটিকালমিনা গ্রামের এক দুর্ধর্ষ অপরাধী ও আতংঙ্কের নাম। এমন কোনো অপরাধ নেই যে তার দ্বারা সংগঠিত হয় নি এবং সে করতে পারে না। তার জ্বলন্ত প্রমান গত ২৮ শে নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে লন্ডন প্রবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের ডান হাত ও সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন সেকান। আর সে নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে ট্রলার বোঝাই করে অস্ত্র আমদানী করা হয় তার নেতৃত্বে। ওই সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঘাগুটিয়া লঞ্চ ঘাটে এক ট্রলার থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু তাই নয় ট্রলারটি জব্দ করাও হয়েছিল। ওই ট্রলারের মাঝি ছিলেন চন্ডিপুর গ্রামের মো.কালা মিয়া সে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমানের দুইজন সমর্থক এ অস্ত্র গুলি আমদানি করেছে তাদের মধ্যে শেখ ফরিদ ওরফে সেকান ছিলেন অন্যতম। এবং মিঠাইভাঙ্গা গ্রামের মোঃ অরুন মিয়ার উপর সন্ত্রাসী হামলার আসামি এই সেই শেখ ফরিদ ওরফে সেকান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোমনা উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের ভিটি কালমিনা গ্রামের অখিল বাবু নামের এক হিন্দু ব্যক্তির এনিমি সম্পত্তি যা ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ‘ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস ১৯৬৫’ জারি করা হয়। এই বিধিমালা অনুসারে ওই ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়, তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘শত্রু সম্পত্তির’ নাম পরিবর্তন করে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ রাখা হয়। এসব অর্পিত সম্পত্তি মূল মালিক বা তদীয় বৈধ উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১’ প্রণয়ন করা হয়। তবে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা জারি না করায় আইন অনুসারে দীর্ঘকাল কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি। সেকান সেই সম্পত্তি নিজের বলে দাবী করে ঘর তুলে দখল দিয়ে দীর্ঘ্য ২০ থেকে ২২ বছর যাবত ভোগ দখল করে আসছেন। এবং গাছপালা কেটে বিক্রি করছেন। কিন্তু তার নিকট কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কি না বা তিনি কোনো প্রকার সরকারি অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন নি। সচেতন মহলের প্রশ্ন তিনি সরকারের অনুমতি ছাড়াই সরকারি মূল্যবান গাছ গুলো কি ভাবে কাটলেন। এবং তার বিরুদ্ধে কোন রহস্যজনক কারনে এখনও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, সরকারের সম্পতি শেখ ফরিদ ওরফে সেকান ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে ঐ সম্পতি হতে গাছ কাটার কোনো প্রকার আবেদন না করেই ১০টি গাছ কেটে ফেলেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে বলেন, এবিষয়ে আমি অবগত আছি। উপজেলা বন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অচিরেই জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে হোমনা উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেন নি। পরে তিনি অফিস সহকারী আব্দুল মান্নানের সাথে কথা বলবেন বলে দায় এড়িয়ে যান। এবং তড়িগড়ি করে ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে শেখ ফরিদ ওরফে সেকান জানান, আমার জায়গার গাছ আমি কাটবো,আবার কিসের অনুমতি লাগবে আমি জানি না। এখানে দীর্ঘ্য দিন ধরে পরিবার নিয়ে থাকতেছি আজ পর্যন্ত কেউই কিছু বলে নি। এখন আবার গাছ কাটার কিসের অনুমতি লাগবে। আমাদের অপরাধ কি? জবাবে হোমনা টিভির প্রতিবেদক তার নিকট কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কি না বা তিনি কোনো প্রকার সরকারি অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন নি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন সওদাগর জানান,আমি এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করার চেষ্টা করবো। আর সে কিসের ভিত্তিতে এখানে বসবাস করছেন এবং তার সঠিক কোনো প্রকার কাগজ পত্র আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখবো।