ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরে ভরা মৌসুমেও খেজুরের রসের আকাল, দাম আকাশচুম্বী

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদ বিধৌত উপজেলা বাঞ্ছারামপুর।যেখানে নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতে মেলে সুস্বাদু খেজুরের রস।কিন্তু এবার হচ্ছে উল্টো।খেজুরের গাছ আছে,তবে তাতে রস নেই।নেই খেজুর গাছের গাছি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঋতুবৈচিত্রের পালাক্রমে চলছে শীত। শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে মুখরোচক খেজুরের রস। কিন্তু গাছির অভাবে সেই মুখরোচক খেজুর রস এখন বিলুপ্তির পথে। রস না পাওয়ার জন্য গাছির অভাব ও ইটভাটার আগ্রাসনকে দায়ী করছেন অনেকে।

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা কোনো এক সময় যেন খেজুরের রস ছাড়া জমতোই না। শীত ও খেজুরের রস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলো।

শীত যত বাড়তো খেজুরের রসের চাহিদাও ততো বাড়তো। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানা ধরনের পিঠাপুলি। বিশেষ করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সফিরকান্দি,মনাইখালি,মরিচাকন্দি,শান্তিপুর,খাল্লঅ,দরিকান্দিসহ শেকেরকান্দিতে। কিন্তু এখন বদলে গেছে সে চিত্র। গ্রামেও মিলছে না খেজুর রস।

উজানচর ইউপির শেকেরকান্দি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকসেবক লীগের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে শীতকালে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা খেজুরগাছ কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন। আগে যেখানে আমাদের গ্রামে ১০০ থেকে ১৫০ গাছ কাটতো গাছিরা এখন সেটা ১৫ থেকে ২০ এ নেমে এসেছে। আগে এক হাড়ি রসের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা নিতো। এখন এক হাড়ি রসের দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। আমার অবাক লাগে কীভাবে বাজারে খেজুরের গুড় পাওয়া যায় ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়। যেখানে এককেজি দুধের দাম মাত্র ৬০ টাকা।

একই গ্রামের গাছি ফেরদৌস মিয়া বলেন, শীতকালে সকাল-সন্ধ্যা গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানাগুড় ও পাটালি তৈরি করতেন অনেকে। এখন আগের মতো গাছ ও নেই। যা কিছু গাছ আছে তাতে আগের মতো রস হয় না।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তি হামিদ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় গাছ কেটে রস বের করার কোনো গাছি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা কারো কারো গাছ রয়েছে, কিন্তু কেটে রস বের করার লোক নেই। কিশান (কৃষক) খরচ করে এ কাজে বিশাল লোকসান তাই খেজুরগাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের পর বছর খেজুরগাছ না তোলায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও কেউ কিশান দিয়ে তোলায় তবে, পরে আর কেটে রস বের করার কোনো গাছি না থাকায় বিলুপ্তির পথে খেজুর রস। বাজারে যে খেজুর গুড় পাওয়া যায় সব ভেজাল, বিষ বলা যায়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

বাঞ্ছারামপুরে ভরা মৌসুমেও খেজুরের রসের আকাল, দাম আকাশচুম্বী

আপডেট সময় ০৩:১৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদ বিধৌত উপজেলা বাঞ্ছারামপুর।যেখানে নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতে মেলে সুস্বাদু খেজুরের রস।কিন্তু এবার হচ্ছে উল্টো।খেজুরের গাছ আছে,তবে তাতে রস নেই।নেই খেজুর গাছের গাছি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঋতুবৈচিত্রের পালাক্রমে চলছে শীত। শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে মুখরোচক খেজুরের রস। কিন্তু গাছির অভাবে সেই মুখরোচক খেজুর রস এখন বিলুপ্তির পথে। রস না পাওয়ার জন্য গাছির অভাব ও ইটভাটার আগ্রাসনকে দায়ী করছেন অনেকে।

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা কোনো এক সময় যেন খেজুরের রস ছাড়া জমতোই না। শীত ও খেজুরের রস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলো।

শীত যত বাড়তো খেজুরের রসের চাহিদাও ততো বাড়তো। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানা ধরনের পিঠাপুলি। বিশেষ করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সফিরকান্দি,মনাইখালি,মরিচাকন্দি,শান্তিপুর,খাল্লঅ,দরিকান্দিসহ শেকেরকান্দিতে। কিন্তু এখন বদলে গেছে সে চিত্র। গ্রামেও মিলছে না খেজুর রস।

উজানচর ইউপির শেকেরকান্দি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকসেবক লীগের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে শীতকালে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা খেজুরগাছ কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন। আগে যেখানে আমাদের গ্রামে ১০০ থেকে ১৫০ গাছ কাটতো গাছিরা এখন সেটা ১৫ থেকে ২০ এ নেমে এসেছে। আগে এক হাড়ি রসের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা নিতো। এখন এক হাড়ি রসের দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। আমার অবাক লাগে কীভাবে বাজারে খেজুরের গুড় পাওয়া যায় ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়। যেখানে এককেজি দুধের দাম মাত্র ৬০ টাকা।

একই গ্রামের গাছি ফেরদৌস মিয়া বলেন, শীতকালে সকাল-সন্ধ্যা গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানাগুড় ও পাটালি তৈরি করতেন অনেকে। এখন আগের মতো গাছ ও নেই। যা কিছু গাছ আছে তাতে আগের মতো রস হয় না।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তি হামিদ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় গাছ কেটে রস বের করার কোনো গাছি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা কারো কারো গাছ রয়েছে, কিন্তু কেটে রস বের করার লোক নেই। কিশান (কৃষক) খরচ করে এ কাজে বিশাল লোকসান তাই খেজুরগাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের পর বছর খেজুরগাছ না তোলায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও কেউ কিশান দিয়ে তোলায় তবে, পরে আর কেটে রস বের করার কোনো গাছি না থাকায় বিলুপ্তির পথে খেজুর রস। বাজারে যে খেজুর গুড় পাওয়া যায় সব ভেজাল, বিষ বলা যায়।