ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিনগ্রহীরা সঙ্কেত পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে!

তথ্যপ্রযোক্তি ডেস্কঃ

পৃথিবী ভিন্ন অন্য গ্রহগুলোতে কোনো প্রাণী রয়েছে কীনা তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রে কখনো কখনো ভিনগ্রহীদের চোখে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত মানুষ সত্যিকার অর্থে ভিনগ্রহীর দেখা পায়নি। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের সাহায্যে ভিনগ্রহীর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছেন। ‘কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট (কাইম)’ প্রকল্পের টেলিস্কোপের নজরে ধরা পড়া সেই আলোকে একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই দু’মাসের মধ্যে অন্তত ১৩ বার জ্বলতে আর নিভতে দেখা গিয়েছে। সেই আলোকে একই জায়গায় অন্তত ৬ বার জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই আলোর ঝলকানিগুলির ‘কারিগর’ আসলে ভিনগ্রহীরা! তারাই বোধহয় বিশাল বিশাল আতসবাজি ফাটাচ্ছে! সেটাই অত শক্তিশালী, অত উজ্জ্বল আলোর ঝলক তৈরি করছে। আর এই এফআরবিকেই ভিনগ্রহীর সঙ্কেত বলে মনে করছেন তারা।আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শমী চট্টোপাধ্যায় সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কোথা থেকে এমন ভিনগ্রহীর আলো আসছে তা নিয়ে জানাতে সক্ষম হয়েছেন। গত সপ্তাহে সিয়াটেল, আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৩৩তম বৈঠকে সেই পর্যবেক্ষণের ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাশূন্যে কখনো কখনো এমন কিছু আলো জ্বলে যেগুলো প্রাকৃতিক আলো নয়। এই আলোর উৎস আসলে ভিনগ্রহীরা। এই ধরনের আলোকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’ (এফআরবি)। আতসবাজির মতো সেই আলো যতই ক্ষণস্থায়ী হোক, কয়েক লহমায় তা যে পরিমাণ তাপশক্তি মহাশূন্যে ছড়িয়ে দেয় তা, আমাদের সূর্যের ছড়ানো আলোর শক্তির (তাপ) চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।

এই গবেষণায় রয়েছেন আরেক ভারতীয় ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অনাবাসী শ্রীহর্ষ তেন্ডুলকার। গবেষকরা জানিয়েছেন, গত ১২ বছরে এমন এফআরবি বা ভিনগ্রহীদের আলো বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেখা গিয়েছে কম করে ৬০টি। এই আলো দেখা দেওয়ার কয়েক মুহূর্তেই উধাও হয়ে গিয়েছে তাই এতদিন বোঝা যায়নি কোথা থেকে আসছে সেই আলো। কিন্তু গত দুই মাসে অন্তত ১৩ বার এই ধরনের ভিনগ্রহী আলো দেখা গেছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে।

অধ্যাপক শমী চট্টোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেছেন ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি) কী জিনিস। তার মতে, এফআরবি আসলে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ। যা গোটা ব্রহ্মাণ্ডেই ছড়িয়ে রয়েছে। আতসবাজি ফাটানো হলে যেমন হয়, তেমনই খুব শক্তিশালী, অত্যন্ত উজ্জ্বল আলোর ঝলক। যাকে বলা হয়, ‘লাইট ফ্ল্যাশেস’। প্রতি দিন ব্রহ্মাণ্ডে এমন আলোর ঝলকানির ঘটনা ঘটে গড়ে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারটি। কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডের অনেক দূরের সেই আতসবাজির আলোর ঝলক আমাদের চোখে খুব একটা ধরা পড়ে না। ২০০৭ সালে তা প্রথম আমাদের নজরে আসে।

শমীর কথায়, ওই রেডিও তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১ থেকে ২ গিগাহার্জ বা ২ থেকে ৪ গিগাহার্জ। আর তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। একেবারে আলোর গতিতেই ছোটে এই তরঙ্গ। আর মূলত তা আলোক-কণা ‘ফোটন’ দিয়েই তৈরি। একটা সূর্যের মোট আয়ুষ্কালে যতটা শক্তির নিঃসরণ হয়, তাকে ১০-এর পিঠে ৩৮টা শূন্য বসিয়ে যে সংখ্যাটা হয়, তা দিয়ে গুণ করলে শক্তির যে পরিমাণ হয়, ওই আলোর ঝলকানি থেকে প্রতি মিলি-সেকেন্ডে তৈরি হয় সেই বিপুল পরিমাণ শক্তি।-আনন্দবাজার

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

ভিনগ্রহীরা সঙ্কেত পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে!

আপডেট সময় ০২:০৪:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯
তথ্যপ্রযোক্তি ডেস্কঃ

পৃথিবী ভিন্ন অন্য গ্রহগুলোতে কোনো প্রাণী রয়েছে কীনা তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রে কখনো কখনো ভিনগ্রহীদের চোখে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত মানুষ সত্যিকার অর্থে ভিনগ্রহীর দেখা পায়নি। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের সাহায্যে ভিনগ্রহীর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছেন। ‘কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট (কাইম)’ প্রকল্পের টেলিস্কোপের নজরে ধরা পড়া সেই আলোকে একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই দু’মাসের মধ্যে অন্তত ১৩ বার জ্বলতে আর নিভতে দেখা গিয়েছে। সেই আলোকে একই জায়গায় অন্তত ৬ বার জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই আলোর ঝলকানিগুলির ‘কারিগর’ আসলে ভিনগ্রহীরা! তারাই বোধহয় বিশাল বিশাল আতসবাজি ফাটাচ্ছে! সেটাই অত শক্তিশালী, অত উজ্জ্বল আলোর ঝলক তৈরি করছে। আর এই এফআরবিকেই ভিনগ্রহীর সঙ্কেত বলে মনে করছেন তারা।আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শমী চট্টোপাধ্যায় সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কোথা থেকে এমন ভিনগ্রহীর আলো আসছে তা নিয়ে জানাতে সক্ষম হয়েছেন। গত সপ্তাহে সিয়াটেল, আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৩৩তম বৈঠকে সেই পর্যবেক্ষণের ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাশূন্যে কখনো কখনো এমন কিছু আলো জ্বলে যেগুলো প্রাকৃতিক আলো নয়। এই আলোর উৎস আসলে ভিনগ্রহীরা। এই ধরনের আলোকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’ (এফআরবি)। আতসবাজির মতো সেই আলো যতই ক্ষণস্থায়ী হোক, কয়েক লহমায় তা যে পরিমাণ তাপশক্তি মহাশূন্যে ছড়িয়ে দেয় তা, আমাদের সূর্যের ছড়ানো আলোর শক্তির (তাপ) চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।

এই গবেষণায় রয়েছেন আরেক ভারতীয় ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অনাবাসী শ্রীহর্ষ তেন্ডুলকার। গবেষকরা জানিয়েছেন, গত ১২ বছরে এমন এফআরবি বা ভিনগ্রহীদের আলো বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেখা গিয়েছে কম করে ৬০টি। এই আলো দেখা দেওয়ার কয়েক মুহূর্তেই উধাও হয়ে গিয়েছে তাই এতদিন বোঝা যায়নি কোথা থেকে আসছে সেই আলো। কিন্তু গত দুই মাসে অন্তত ১৩ বার এই ধরনের ভিনগ্রহী আলো দেখা গেছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে।

অধ্যাপক শমী চট্টোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেছেন ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি) কী জিনিস। তার মতে, এফআরবি আসলে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ। যা গোটা ব্রহ্মাণ্ডেই ছড়িয়ে রয়েছে। আতসবাজি ফাটানো হলে যেমন হয়, তেমনই খুব শক্তিশালী, অত্যন্ত উজ্জ্বল আলোর ঝলক। যাকে বলা হয়, ‘লাইট ফ্ল্যাশেস’। প্রতি দিন ব্রহ্মাণ্ডে এমন আলোর ঝলকানির ঘটনা ঘটে গড়ে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারটি। কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডের অনেক দূরের সেই আতসবাজির আলোর ঝলক আমাদের চোখে খুব একটা ধরা পড়ে না। ২০০৭ সালে তা প্রথম আমাদের নজরে আসে।

শমীর কথায়, ওই রেডিও তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১ থেকে ২ গিগাহার্জ বা ২ থেকে ৪ গিগাহার্জ। আর তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। একেবারে আলোর গতিতেই ছোটে এই তরঙ্গ। আর মূলত তা আলোক-কণা ‘ফোটন’ দিয়েই তৈরি। একটা সূর্যের মোট আয়ুষ্কালে যতটা শক্তির নিঃসরণ হয়, তাকে ১০-এর পিঠে ৩৮টা শূন্য বসিয়ে যে সংখ্যাটা হয়, তা দিয়ে গুণ করলে শক্তির যে পরিমাণ হয়, ওই আলোর ঝলকানি থেকে প্রতি মিলি-সেকেন্ডে তৈরি হয় সেই বিপুল পরিমাণ শক্তি।-আনন্দবাজার