ঢাকা ০৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কয়েক বছরের মধ্যে যে প্রযুক্তিগুলো হারিয়ে যাবে

 তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ

ফিচার ফোনে স্নেক গেমসটির কথা অনেকেরই মনে আছে। আমরা যখন গেমটি খেলতাম তখন স্নেকটিকে কয়েক মিটার বড় করে ফেলার পরে লেজে কামড় খাইয়ে গেম ওভার করিয়ে দিতাম এবং রাগে ফোনটি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মতো ইচ্ছা হতো। কিংবা যে সময় আমাদের মুভি দেখার একমাত্র উপায় ছিল ভিসিআর বা ডিভিডি প্লেয়ার। এসব জিনিস এখন আর খুঁজেও পাওয়া যায় না। কারণ মানুষ এবং মানুষের তৈরি প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত এত দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে যে, প্রত্যেকটি নতুন ডিভাইস এবং নতুন প্রযুক্তিও কয়েক বছরের মধ্যেই পুরনো হয়ে যায় এবং একসময় একেবারে হারিয়ে যায়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে প্রযুক্তিগুলো হারিয়ে যাবে সেগুলো থেকে কয়েকটি নিয়েই সাজানো হয়েছে এ লেখাটি।

রিমোট কনট্রোল

রিমোট কনট্রোল হলো—বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ব্যবহারযোগ্য একটি প্রযুক্তি। টেলিভিশন, এসি, গাড়ি ছাড়াও এখন আরো অনেক ডিভাইসের জন্য বর্তমানে আধুনিক বিভিন্ন রিমোট কনট্রোল ডিভাইস পাওয়া যায়। যেগুলো ছাড়া সেই ডিভাইসটি ভালোভাবে কনট্রোল করা কঠিন। টিভি দেখার সময় সোফার কুশনের নিচে টিভির রিমোট হারিয়ে যাওয়া কতটা অস্থিরতা ব্যাপার তা হয়তো আপনাদের অজানা নয়। তবে এখনই রিমোট কনট্রোল ব্যবহারের পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমে গিয়েছে। বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনের ওজ সেন্সর দেওয়া থাকে যার সাহায্যে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই প্রায় সবধরনের রিমোট কনট্রোল ডিভাইস কনট্রোল করা যায়।

এছাড়া এখন বিভিন্ন ইলেকট্রিক ডিভাইসের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক স্মার্টফোন অ্যাপস ডেভেলপ করছে যাতে সেই অ্যাপটির সাহায্যে স্মার্টফোন থেকেই ডিভাইসটি কনট্রোল করা সম্ভব হয়। এ কারণেই রিমোট কনট্রোলের ব্যবহার আগের থেকে অনেক কমতে শুরু করেছে। এছাড়া এখন সরাসরি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ভয়েস ডিকটেশন দিয়েই অনেক স্মার্ট ডিভাইস কনট্রোল করা সম্ভব হয়। আগামী কয়েক বছরে এই ধরনের আরো অনেক নতুন নতুন সেন্সর এবং নতুন টেকনোলজি আসবে যেগুলো ডেডিকেটেড রিমোট কনট্রোলকে সম্পূর্ণভাবে রিপ্লেস করে ফেলবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই রিমোট কনট্রোল হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ড

দশ বছর আগেও ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ছিল না, তখন কোথাও পেমেন্ট করার বা টাকা দেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ক্যাশ অথবা ব্যাংক চেক। এরপর যখন ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড চালু হলো—তখন এটা ছিল পেমেন্ট সিস্টেমের দিক থেকে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে অনলাইন পেমেন্ট করার সুবিধা চালু হওয়ার পরে এটাই হয়ে দাঁড়ায় পেমেন্ট করার সব থেকে ঝামেলামুক্ত পেমেন্ট সিস্টেমের ধারা। ক্রেডিট কার্ড এখনো পর্যন্ত অন্যতম জনপ্রিয় একটি পেমেন্ট মেথড। তবে এরপরে মোবাইল ওয়ালেটের সুবিধা যেমন- চধুঢ়ধষ, ঝশত্রষষ কিংবা বাংলাদেশের নকধংয-এর মতো পেমেন্ট সিস্টেমগুলো চালু হওয়ার পরে সেগুলো হয়ে দাঁড়ায় ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় আরো সহজলভ্য এবং আরো বেশি সহজতর।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, ভবিষ্যতে এসব মোবাইল ওয়ালেট বা যার সাহায্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করেই সহজে পেমেন্ট করা যায়, এগুলোই হবে সব থেকে জনপ্রিয় এবং সব থেকে বেশি ব্যবহার করা পেমেন্ট মেথড। আগামী কয়েক বছরে এসব মোবাইল ওয়ালেটের সুবিধা এবং ফিচারস আরো বাড়বে এবং অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ডকে সম্পূর্ণভাবে রিপ্লেস করে ফেলার ক্ষমতা রাখতে এসব মোবাইল ওয়ালেটগুলো। তাছাড়া ভবিষ্যতে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করে পেমেন্ট করার সুবিধাও চলে আসবে।

চাবি

কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো আপনার ছেলে-মেয়েরা বা তাদের ছেলেমেয়েরা আপনার পুরনো ড্রয়ার ঘেঁটে স্টিলের তৈরি অদ্ভুত ডিজাইনের ছোট একটি পাত পেয়ে আপনাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে এটি কি? তখন আপনি তাদেরকে বলবেন সেই সময়টার কথা যখন চাবি ব্যবহার করে আমরা আমাদের মূল্যবান জিনিসের ড্রয়ার, আমাদের ঘরের দরজা, আমাদের গাড়ি ইত্যাদি সুরক্ষিত রাখতাম। আর এই চাবি একবার হারিয়ে কতটা হতাশার মধ্যে পড়তে হতো আমাদেরকে। কিন্তু আপনার ছেলে-মেয়েদেরকে অথবা খুব বেশি হলে তাদের সন্তানদেরকে এই ঝামেলার মধ্যে কখনোই পড়তে হবে না। কারণ, তখন চাবিকে সিকিউরিটি কি হিসেবে ব্যবহার করার আর প্রয়োজনই পড়বে না। তখন চাবি জিনিসটি এতই পুরনো হয়ে যাবে যে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করার মতো অবস্থা হবে। তখন চাবির জায়গা রিপ্লেস করবে আরো উন্নত সিকিউরিটি সিস্টেম যেমন, থ্রিডি ফেস রিকগনিশন, ভয়েস রিকগনিশন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি, আইরিশ স্ক্যানিং ইত্যাদি। তখন হয়তো আপনার ঘরের দরজার লক খুলতে হলে আপনার চোখ স্ক্যান করতে হবে অথবা আপনার ফেসের থ্রিডি স্ক্যানিং করাতে হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে আরো বেশি রিলায়েবল সিকিউরিটি সিস্টেম আসতে পারে, তবে সেগুলো অবশ্যই মেটালের তৈরি চাবির মতো আউটডেটেড কিছু হবে না।

ওয়্যার

হেডফোনের তার জড়িয়ে যাওয়ার পরে সেটা ঠিক করা পৃথিবীর সব থেকে বিরক্তিকর কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে আমাদের ডিজিটার ডিভাইসগুলোতে তারের বা ওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা একেবারে উঠে যায়নি। হেডফোনের কথা বললে এখন মানুষ তারযুক্ত হেডফোনের তুলনায় ওয়্যারলেস ব্লুটুথ হেডফোনই বেশি ব্যবহার করে থাকে। তবে অন্যান্য ডিভাইস এখনো সেভাবে তারবিহীন হয়ে ওঠেনি। এখনকার অনেক ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনই ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্টেড। মানুষ এখনো ওয়্যারড চার্জারি প্রিফার করে ফাস্ট চারজিং-এর জন্য। ওয়্যারলেস মাউস এবং কিবোর্ড অনেক আগে থেকে মার্কেটে পাওয়া গেলেও সাধারণ পিসি ইউজাররা এবং গেমাররা সবসময়ই তারযুক্ত ডিভাইস প্রিফার করেন।

তবে সবসময় এমনটা থাকবে না। আগামী কয়েক বছরে তারবিহীন ডিভাইসের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে যেমনটা বেড়েছে হেডফোনের ক্ষেত্রে। মানুষ ওয়্যারলেস টেকনোলজির দিকে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে, যখন ওয়্যারলেস টেকনোলজি অ্যাকচুয়ালি আগের থেকে বেটার এবং মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে। আশা করা যায় আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যেই প্রায় মানুষই ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলোর প্রতি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়বে এবং তারযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে এসে একেবারেই শূন্য হয়ে যাবে।

সিরিঞ্জ

যারা ইনজেকশন বা সিরিঞ্জ পুশ করতে ভয় পান, তাদের জন্য এটা সব থেকে ভালো খবর হতে পারে। আপনি হয়তো জানেন না যে, হেলথ কেয়ার টেকনোলজি একটি নতুন ধরনের সিরিঞ্জ আবিষ্কার করেছে যেটাতে কোনো নিডল নেই। এই ইনজেকশনটির নাম ‘জেট ইনজেকশন’। যেহেতু নিডল নেই, তাই এই সিরিঞ্জটি ইনজেক্ট করার সময় রোগীকে ব্যথা পেতে হবে না। এই জেট ইনজেকশন আপনার ত্বকের ওপরে প্লেস করা হয় এবং এটি আপনার শরীরে ক্ষুদ্র ফ্লুইড স্ট্রিমের সাহায্যে মেডিসিন ইনজেক্ট করে। এছাড়া রোগীরা সবসময় ইনজেকশনের তুলনায় ওরাল মেডিসিন প্রিফার করে থাকেন।

তাই এমআইটি-এর রিসার্চাররা নতুন ধরনের ক্যাপসুল তৈরি করছেন যেটি ইনজেকশনের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এই ক্যাপসুলটি অন্যান্য ক্যাপসুলের মতোই খেতে হবে এবং এই ক্যাপসুলটির ভেতরে থাকবে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিরিঞ্জ যেগুলো আপনার শরীরে মেডিসিন ইনজেক্ট করবে ক্যাপসুলটি আপনার পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পরে। এই প্রোসেসটি শুনতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন যে এটি যথেষ্ট সেফ একটি প্রোসেস হতে চলেছে।

লং ডেলিভারি সার্ভিস

আগামী বছরগুলোতে প্রোডাক্ট ডেলিভারি সার্ভিস অনেক বেশি ফাস্ট এবং অনেক বেশি রিলায়েবল হবে। এখন আমরা অনলাইন থেকে কোনো প্রোডাক্ট কিনলে সেটি বাসায় ডেলিভারি নিতে অ্যামেরিকান কান্ট্রিগুলোতে কমপক্ষে ১ দিন থেকে শুরু করে আমাদের দেশে ৪-৫ দিন পর্যন্তও সময় লেগে যায়। কারণ, সবধরনের প্যাকেজ ডেলিভারি করা হয় ট্রেডিশনাল শিপিং মেথড যেমন ট্রাক কিংবা গাড়ি এগুলোর সাহায্যে। তবে এমন লং শিপিং টাইমের দিন আর থাকবে না, যখন ড্রোনের সাহায্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করার ব্যবস্থা করবে শিপিং কোম্পানিরা। অ্যামেরিকার কয়েকটি স্টেটে অ্যামাজন ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোন ডেলিভারির সুবিধা চালু করেছে যার সাহায্যে একটি প্রোডাক্ট ড্রোনের সাহায্যে আকাশপথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডেলিভারি করা যায়। আগামী বছরগুলোতে আরো অনেক ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এবং ডেলিভারি কোম্পানিরাও ড্রোনের সাহায্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করবে। আশা করা যায়, সর্বোচ্চ আর ১৫-২০ বছরের মধ্যেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি করার প্রাইমারি মেথড হয়ে যাবে ড্রোন, কিংবা ড্রোনের থেকেও আরো বেশি কনভেনিয়েন্ট এবং দ্রুততর কোনো মেথড।

সিগনেচার

এখন আমাদেরকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সাইন করতে হলে আমাদেরকে একমাত্র বলপয়েন্ট কলম এবং নিজের নাম ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু র?্যাপিডলি ডেভেলপিং টেকনোলজির সঙ্গে সঙ্গে এই সাইনিং মেথডটিও হয়ে পড়ছে ব্যাকডেটেড। এখন থেকে ২০ বছর পরের কথা যদি চিন্তা করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তখন আমাদের ডকুমেন্টেশন ভেরিফাই করার জন্য আমাদেরকে আর নিজেদের হাতে লেখা সাইনের ওপরে ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে না। কারণ, হাতে লেখা সিগনেচার খুব সহজেই কপি করা বা জাল করা সম্ভব।

ভবিষ্যতে যখনই আমাদের সিগনেচার করার দরকার পড়বে বা নিজের আইডেন্টিটি ভেরিফাই করার দরকার পড়বে, আমাদেরকে কলম হাতে নেওয়ার দরকার পড়বে না। আমরা আমাদের আইডেন্টি ভেরিফাই করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মেথড ব্যবহার করতে পারবো। হতে পারে সেটি ফেস রিকগনিশন কিংবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন কিংবা আইরিশ স্ক্যানিং আবার হতে পারে ডিএনএ স্ক্যানিং এর মতো ওভারকিলড কোনো টেকনোলজি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

কয়েক বছরের মধ্যে যে প্রযুক্তিগুলো হারিয়ে যাবে

আপডেট সময় ১০:৩২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০১৯
 তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ

ফিচার ফোনে স্নেক গেমসটির কথা অনেকেরই মনে আছে। আমরা যখন গেমটি খেলতাম তখন স্নেকটিকে কয়েক মিটার বড় করে ফেলার পরে লেজে কামড় খাইয়ে গেম ওভার করিয়ে দিতাম এবং রাগে ফোনটি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মতো ইচ্ছা হতো। কিংবা যে সময় আমাদের মুভি দেখার একমাত্র উপায় ছিল ভিসিআর বা ডিভিডি প্লেয়ার। এসব জিনিস এখন আর খুঁজেও পাওয়া যায় না। কারণ মানুষ এবং মানুষের তৈরি প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত এত দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে যে, প্রত্যেকটি নতুন ডিভাইস এবং নতুন প্রযুক্তিও কয়েক বছরের মধ্যেই পুরনো হয়ে যায় এবং একসময় একেবারে হারিয়ে যায়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে প্রযুক্তিগুলো হারিয়ে যাবে সেগুলো থেকে কয়েকটি নিয়েই সাজানো হয়েছে এ লেখাটি।

রিমোট কনট্রোল

রিমোট কনট্রোল হলো—বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ব্যবহারযোগ্য একটি প্রযুক্তি। টেলিভিশন, এসি, গাড়ি ছাড়াও এখন আরো অনেক ডিভাইসের জন্য বর্তমানে আধুনিক বিভিন্ন রিমোট কনট্রোল ডিভাইস পাওয়া যায়। যেগুলো ছাড়া সেই ডিভাইসটি ভালোভাবে কনট্রোল করা কঠিন। টিভি দেখার সময় সোফার কুশনের নিচে টিভির রিমোট হারিয়ে যাওয়া কতটা অস্থিরতা ব্যাপার তা হয়তো আপনাদের অজানা নয়। তবে এখনই রিমোট কনট্রোল ব্যবহারের পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমে গিয়েছে। বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনের ওজ সেন্সর দেওয়া থাকে যার সাহায্যে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই প্রায় সবধরনের রিমোট কনট্রোল ডিভাইস কনট্রোল করা যায়।

এছাড়া এখন বিভিন্ন ইলেকট্রিক ডিভাইসের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক স্মার্টফোন অ্যাপস ডেভেলপ করছে যাতে সেই অ্যাপটির সাহায্যে স্মার্টফোন থেকেই ডিভাইসটি কনট্রোল করা সম্ভব হয়। এ কারণেই রিমোট কনট্রোলের ব্যবহার আগের থেকে অনেক কমতে শুরু করেছে। এছাড়া এখন সরাসরি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ভয়েস ডিকটেশন দিয়েই অনেক স্মার্ট ডিভাইস কনট্রোল করা সম্ভব হয়। আগামী কয়েক বছরে এই ধরনের আরো অনেক নতুন নতুন সেন্সর এবং নতুন টেকনোলজি আসবে যেগুলো ডেডিকেটেড রিমোট কনট্রোলকে সম্পূর্ণভাবে রিপ্লেস করে ফেলবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই রিমোট কনট্রোল হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ড

দশ বছর আগেও ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ছিল না, তখন কোথাও পেমেন্ট করার বা টাকা দেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ক্যাশ অথবা ব্যাংক চেক। এরপর যখন ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড চালু হলো—তখন এটা ছিল পেমেন্ট সিস্টেমের দিক থেকে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে অনলাইন পেমেন্ট করার সুবিধা চালু হওয়ার পরে এটাই হয়ে দাঁড়ায় পেমেন্ট করার সব থেকে ঝামেলামুক্ত পেমেন্ট সিস্টেমের ধারা। ক্রেডিট কার্ড এখনো পর্যন্ত অন্যতম জনপ্রিয় একটি পেমেন্ট মেথড। তবে এরপরে মোবাইল ওয়ালেটের সুবিধা যেমন- চধুঢ়ধষ, ঝশত্রষষ কিংবা বাংলাদেশের নকধংয-এর মতো পেমেন্ট সিস্টেমগুলো চালু হওয়ার পরে সেগুলো হয়ে দাঁড়ায় ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় আরো সহজলভ্য এবং আরো বেশি সহজতর।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, ভবিষ্যতে এসব মোবাইল ওয়ালেট বা যার সাহায্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করেই সহজে পেমেন্ট করা যায়, এগুলোই হবে সব থেকে জনপ্রিয় এবং সব থেকে বেশি ব্যবহার করা পেমেন্ট মেথড। আগামী কয়েক বছরে এসব মোবাইল ওয়ালেটের সুবিধা এবং ফিচারস আরো বাড়বে এবং অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ক্যাশ এবং ক্রেডিট কার্ডকে সম্পূর্ণভাবে রিপ্লেস করে ফেলার ক্ষমতা রাখতে এসব মোবাইল ওয়ালেটগুলো। তাছাড়া ভবিষ্যতে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করে পেমেন্ট করার সুবিধাও চলে আসবে।

চাবি

কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো আপনার ছেলে-মেয়েরা বা তাদের ছেলেমেয়েরা আপনার পুরনো ড্রয়ার ঘেঁটে স্টিলের তৈরি অদ্ভুত ডিজাইনের ছোট একটি পাত পেয়ে আপনাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে এটি কি? তখন আপনি তাদেরকে বলবেন সেই সময়টার কথা যখন চাবি ব্যবহার করে আমরা আমাদের মূল্যবান জিনিসের ড্রয়ার, আমাদের ঘরের দরজা, আমাদের গাড়ি ইত্যাদি সুরক্ষিত রাখতাম। আর এই চাবি একবার হারিয়ে কতটা হতাশার মধ্যে পড়তে হতো আমাদেরকে। কিন্তু আপনার ছেলে-মেয়েদেরকে অথবা খুব বেশি হলে তাদের সন্তানদেরকে এই ঝামেলার মধ্যে কখনোই পড়তে হবে না। কারণ, তখন চাবিকে সিকিউরিটি কি হিসেবে ব্যবহার করার আর প্রয়োজনই পড়বে না। তখন চাবি জিনিসটি এতই পুরনো হয়ে যাবে যে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করার মতো অবস্থা হবে। তখন চাবির জায়গা রিপ্লেস করবে আরো উন্নত সিকিউরিটি সিস্টেম যেমন, থ্রিডি ফেস রিকগনিশন, ভয়েস রিকগনিশন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি, আইরিশ স্ক্যানিং ইত্যাদি। তখন হয়তো আপনার ঘরের দরজার লক খুলতে হলে আপনার চোখ স্ক্যান করতে হবে অথবা আপনার ফেসের থ্রিডি স্ক্যানিং করাতে হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে আরো বেশি রিলায়েবল সিকিউরিটি সিস্টেম আসতে পারে, তবে সেগুলো অবশ্যই মেটালের তৈরি চাবির মতো আউটডেটেড কিছু হবে না।

ওয়্যার

হেডফোনের তার জড়িয়ে যাওয়ার পরে সেটা ঠিক করা পৃথিবীর সব থেকে বিরক্তিকর কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে আমাদের ডিজিটার ডিভাইসগুলোতে তারের বা ওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা একেবারে উঠে যায়নি। হেডফোনের কথা বললে এখন মানুষ তারযুক্ত হেডফোনের তুলনায় ওয়্যারলেস ব্লুটুথ হেডফোনই বেশি ব্যবহার করে থাকে। তবে অন্যান্য ডিভাইস এখনো সেভাবে তারবিহীন হয়ে ওঠেনি। এখনকার অনেক ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনই ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্টেড। মানুষ এখনো ওয়্যারড চার্জারি প্রিফার করে ফাস্ট চারজিং-এর জন্য। ওয়্যারলেস মাউস এবং কিবোর্ড অনেক আগে থেকে মার্কেটে পাওয়া গেলেও সাধারণ পিসি ইউজাররা এবং গেমাররা সবসময়ই তারযুক্ত ডিভাইস প্রিফার করেন।

তবে সবসময় এমনটা থাকবে না। আগামী কয়েক বছরে তারবিহীন ডিভাইসের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে যেমনটা বেড়েছে হেডফোনের ক্ষেত্রে। মানুষ ওয়্যারলেস টেকনোলজির দিকে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে, যখন ওয়্যারলেস টেকনোলজি অ্যাকচুয়ালি আগের থেকে বেটার এবং মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে। আশা করা যায় আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যেই প্রায় মানুষই ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলোর প্রতি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়বে এবং তারযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে এসে একেবারেই শূন্য হয়ে যাবে।

সিরিঞ্জ

যারা ইনজেকশন বা সিরিঞ্জ পুশ করতে ভয় পান, তাদের জন্য এটা সব থেকে ভালো খবর হতে পারে। আপনি হয়তো জানেন না যে, হেলথ কেয়ার টেকনোলজি একটি নতুন ধরনের সিরিঞ্জ আবিষ্কার করেছে যেটাতে কোনো নিডল নেই। এই ইনজেকশনটির নাম ‘জেট ইনজেকশন’। যেহেতু নিডল নেই, তাই এই সিরিঞ্জটি ইনজেক্ট করার সময় রোগীকে ব্যথা পেতে হবে না। এই জেট ইনজেকশন আপনার ত্বকের ওপরে প্লেস করা হয় এবং এটি আপনার শরীরে ক্ষুদ্র ফ্লুইড স্ট্রিমের সাহায্যে মেডিসিন ইনজেক্ট করে। এছাড়া রোগীরা সবসময় ইনজেকশনের তুলনায় ওরাল মেডিসিন প্রিফার করে থাকেন।

তাই এমআইটি-এর রিসার্চাররা নতুন ধরনের ক্যাপসুল তৈরি করছেন যেটি ইনজেকশনের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এই ক্যাপসুলটি অন্যান্য ক্যাপসুলের মতোই খেতে হবে এবং এই ক্যাপসুলটির ভেতরে থাকবে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিরিঞ্জ যেগুলো আপনার শরীরে মেডিসিন ইনজেক্ট করবে ক্যাপসুলটি আপনার পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পরে। এই প্রোসেসটি শুনতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন যে এটি যথেষ্ট সেফ একটি প্রোসেস হতে চলেছে।

লং ডেলিভারি সার্ভিস

আগামী বছরগুলোতে প্রোডাক্ট ডেলিভারি সার্ভিস অনেক বেশি ফাস্ট এবং অনেক বেশি রিলায়েবল হবে। এখন আমরা অনলাইন থেকে কোনো প্রোডাক্ট কিনলে সেটি বাসায় ডেলিভারি নিতে অ্যামেরিকান কান্ট্রিগুলোতে কমপক্ষে ১ দিন থেকে শুরু করে আমাদের দেশে ৪-৫ দিন পর্যন্তও সময় লেগে যায়। কারণ, সবধরনের প্যাকেজ ডেলিভারি করা হয় ট্রেডিশনাল শিপিং মেথড যেমন ট্রাক কিংবা গাড়ি এগুলোর সাহায্যে। তবে এমন লং শিপিং টাইমের দিন আর থাকবে না, যখন ড্রোনের সাহায্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করার ব্যবস্থা করবে শিপিং কোম্পানিরা। অ্যামেরিকার কয়েকটি স্টেটে অ্যামাজন ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোন ডেলিভারির সুবিধা চালু করেছে যার সাহায্যে একটি প্রোডাক্ট ড্রোনের সাহায্যে আকাশপথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডেলিভারি করা যায়। আগামী বছরগুলোতে আরো অনেক ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এবং ডেলিভারি কোম্পানিরাও ড্রোনের সাহায্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করবে। আশা করা যায়, সর্বোচ্চ আর ১৫-২০ বছরের মধ্যেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি করার প্রাইমারি মেথড হয়ে যাবে ড্রোন, কিংবা ড্রোনের থেকেও আরো বেশি কনভেনিয়েন্ট এবং দ্রুততর কোনো মেথড।

সিগনেচার

এখন আমাদেরকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সাইন করতে হলে আমাদেরকে একমাত্র বলপয়েন্ট কলম এবং নিজের নাম ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু র?্যাপিডলি ডেভেলপিং টেকনোলজির সঙ্গে সঙ্গে এই সাইনিং মেথডটিও হয়ে পড়ছে ব্যাকডেটেড। এখন থেকে ২০ বছর পরের কথা যদি চিন্তা করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তখন আমাদের ডকুমেন্টেশন ভেরিফাই করার জন্য আমাদেরকে আর নিজেদের হাতে লেখা সাইনের ওপরে ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে না। কারণ, হাতে লেখা সিগনেচার খুব সহজেই কপি করা বা জাল করা সম্ভব।

ভবিষ্যতে যখনই আমাদের সিগনেচার করার দরকার পড়বে বা নিজের আইডেন্টিটি ভেরিফাই করার দরকার পড়বে, আমাদেরকে কলম হাতে নেওয়ার দরকার পড়বে না। আমরা আমাদের আইডেন্টি ভেরিফাই করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মেথড ব্যবহার করতে পারবো। হতে পারে সেটি ফেস রিকগনিশন কিংবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন কিংবা আইরিশ স্ক্যানিং আবার হতে পারে ডিএনএ স্ক্যানিং এর মতো ওভারকিলড কোনো টেকনোলজি।