তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে মানুষ একের পর এক যান তৈরি করে চলেছে৷ তেমনই একটি নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা হাইপারলুপ রেল নেটওয়ার্ক। এটি নিমেষের মধ্যে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে ও প্রায় নীরবে পরিবহণের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে৷
হাইপারলুপ ট্রেন চুম্বকের ওপর দিয়ে ছুটবে৷ তখন কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরোপের সব শহরে পৌঁছে যাওয়া যাবে৷ নেদারল্যান্ডসের ডেফট প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইপারলুপ বিভাগ এমন স্বপ্নই দেখছে৷ কিন্তু পুরানো এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে কি সত্যি ইউরোপের ভবিষ্যতের পরিবহণ নেটওয়ার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে?
২৪ বছর বয়সি রিনেকে ফান নর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ইউরোপীয় হাইপারলুপ নেটওয়ার্কের রূপরেখা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘হাইপারলুপের কল্যাণে ইউরোপে আর কোনো সীমানা টের পাওয়া যাবে না৷ কোনো এক স্টেশনে গিয়ে হাইপারলুপে চড়ে বসলে সামান্য সময়ের মধ্যে ইউরোপের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে৷ বর্তমানে ট্রেনে কয়েক ঘণ্টা, অথবা বিমানে চড়ে যাতায়াত করতে হয়৷ বিমান দ্রুত হলেও তাতে প্রবেশ করতেই অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়৷ তাতে কোনো স্বাচ্ছন্দ্য নেই৷’
কিন্তু এটা কি নিছক অলীক স্বপ্ন? নাকি কোনো এক সময়ে ঘণ্টায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার গতিতে মানুষ সত্যি যাতায়াত করতে পারবে? ডেভেলপার টিমের প্রধান হিসেবে টিম ফ্লেসহুয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন৷ তার মতে, ‘হাইপারলুপকে আমরা পরিবহণের পঞ্চম যান হিসেবে বর্ণনা করি৷ এটি হলো পরিবহণের ভবিষ্যৎ৷ এটি অনেকটা ট্রেনের মতো, যা পাইপের মধ্যে ভরা থাকে৷ নল থেকে বাতাস বার করে নিয়ে প্রায় ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করা হয়৷ ফলে বাতাসের ধাক্কা প্রায় আর থাকে না৷ তাছাড়া ট্রেন চুম্বকের উপর ভাসতে থাকে৷ ফলে ফ্রিকশন বা ঘর্ষণও হয় না৷ তাই অত্যন্ত কম জ্বালানি ব্যবহার করেও বিশাল গতিতে চলা সম্ভব হয়৷’
কিন্তু কীভাবে ও কোথায় ভাসে সেই ট্রেন? ডেভেলপার টিমের প্রধান টিম ফ্লেসহুয়ার বলেন, ‘এখানে চুম্বক দেখা যাবে৷ বর্তমানে ভিতরে ছোট আকারের কিছু চুম্বক রয়েছে৷ এগুলিকে হলবাখ-অ্যারেস বলা হয়, যা অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক৷ এর সুবিধা হলো চৌম্বক শক্তি নীচের দিকে পরিচালিত হয়৷ তাই যাত্রীরা উপরে বসে কিছুই টের পাবেন না৷’
এই হলবাখ-অ্যারে আসলে বিশেষভাবে সাজানো চুম্বকের সমষ্টি, যার ফলে সম্মিলিত চৌম্বক শক্তি আরও বেড়ে যায়৷ রেল লাইন ও ট্রেনের চুম্বক পরস্পরকে ঠেলা মারে৷ ফলে ট্রেনটি ভাসমান অবস্থায় থাকে৷ এক ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ট্রেনটিকে রেলের উপর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷
২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় হাইপারলুপ নেটওয়ার্কের কাজ শেষ করা ডেল্ফট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমের লক্ষ্য৷ এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ৷ আরও একতলা উপরে প্রকল্পের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব৷ সেখানে একদল তরুণ-তরুণী চলতি বছরের মধ্যেই ক্যাপসুলের মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্র সংস্করণ গড়ে তোলার কাজ করছেন৷
কনার ডিলন কাজের পরিমাণ ও ব্যস্ততা দেখে প্রশ্ন করেন, এই প্রকল্পের জন্য সবাই এক বছর ছুটি নিয়েছে কিনা৷ উত্তরে হাইপারলুপ টিম ক্যাপ্টেন রিনেকে ফান নর্ট জানান, ‘আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ তাই করেছে৷ সব মিলিয়ে ৩৯ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩২ জন পুরোপুরি এই কাজে জড়িত৷ আমাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাচেলার ডিগ্রির পর হাতেনাতে কাজ করতে এক বছরের বিরতি নিয়েছে৷ প্রতিদিন সকাল নটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমরা এখানে থাকি৷ আমরা চলতি বছর স্পেস-এক্স হাইপারলুপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার অপেক্ষায় রয়েছি৷ সেই লক্ষ্যে কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে৷ কিন্তু সবার মনে বিপুল উৎসাহ রয়েছে৷ এমন দলের অংশ হিসেবে কাজ করার জন্য বাড়তি প্রেরণা পাওয়া যায়৷’
কনার ডিলন বলেন, ‘ডেফট টিমের সামনে বিশাল কাজ পড়ে রয়েছে৷ ইউরোপ আদৌ এক হাইপারলুপ নেটওয়ার্ক পাবে কিনা, কেউ তা জানে না৷ সেটা সম্ভব হলে ইউরোপের মানুষ আরও দ্রুত, আরও শান্ত পরিবেশে ভ্রমণ করতে পারবেন৷’