ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজ দেশেই রোষের মুখে ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি। তারপর থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমন হুমকি দিয়ে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও হামলা করে তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ৫২টি স্থানে হামলা করা হবে। সেগুলো মার্কিন সেনাদের টার্গেটে রয়েছে।

ইরানকে হুমকি দিয়ে এমন মন্তব্যের পরই নিজ দেশে রোষের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তার সমালোচনায় সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। তাদের দাবি, ইরানের সাংস্কৃতিক স্থানগুলিতে হামলার হুমকি দিয়ে আদতে মহিলা, শিশু নির্বিশেষে সে দেশের নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলার কথাই বলেছেন ট্রাম্প, যা যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার এমন আচরণ শোভনীয় নয়।

কাসেম সোলায়মানি হত্যা নিয়ে উত্তেজনার আবহেই সম্প্রতি ইরানকে হুমকি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘সোলায়মানি হত্যার বদলা হিসেবে কোনো মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা হলে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের আরও ৫২টি জায়গায় আক্রমণ করার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে। তার মধ্যে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে যা ইরান ও তার সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সব লক্ষ্যবস্তুতে খুব দ্রুত এবং খুব কঠোর আঘাত হানা হবে। আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র।’

কয়েক বছর আগে ইরানে মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জনকে পণবন্দি করার ঘটনা ঘটেছিল। তারই প্রতীক হিসাবে ৫২টি জায়গায় হামলার কথা ভাবা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন ট্রাম্প। তার এই মন্তব্য নিয়েই তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এভাবে প্রকাশ্যে হামলার হুমকি দেওয়ায় ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সে দেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্র্রাথী জো বাইডেন এবং ম্যাসাচুসেটস এর সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। সংবাদমধ্যমে তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টি সম্পর্কে মার্কিন নাগরিকদের না জানিয়ে, তাদের সম্মতি ছাড়া দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের। আর এই লোকটার মাথায় কী ঘুরছে, আমরা কেউই তা জানি না। এর জন্যই ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছি আমরা। ন্যাটো সহযোগী দেশগুলির থেকেও আমাদের দূরত্ব বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট নিজের মতো করে টুইটারে ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ।’

ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া থেকে নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে ইমপিচমেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ট্রাম্প। তার মধ্যেও কী করছেন দেখুন। আমাদের যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উনি। ২০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় পড়ে রয়েছি আমরা। এখন যুদ্ধ আরও বর্ধিত করার কথা বলছেন উনি। পশ্চিম এশিয়ায় না জানি কত হাজার মার্কিন নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। দেশের সমস্ত নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই প্রেসিডেন্টের কর্তব্য, দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়।’

ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করে এলিজাবেথ ওয়ারেন টুইট বার্তায় বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর হুমকি দিচ্ছেন আপনি। ইরানের সঙ্গে কিন্তু কোনো লড়াই নেই আমাদের। আমেরিকানরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চান না। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। এভাবে আপনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন না। মার্কিন বাহিনী এবং দেশের কূটনীতিবিদদের এভাবে বিপদে ফেলতে পারেন না আপনি।’

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ টুইটারে লেখেন, ‘এটা যুদ্ধাপরাধ। সাংস্কৃতিক জায়গায় হামলার হুমকি দিয়ে আসলে নিরীহ পরিবার, মহিলা ও শিশুদের মেরে ফেলার কথা বলছেন আপনি। এতে আপনার পৌরুষ প্রমাণ হয় না। এতে আপনি সুকৌশলী, তাও প্রমাণ হয় না। বরং এতে আপনার দানব রূপটাই প্রকাশ পায়।’

তবে সমালোচনার মুখে পড়েও নিজের অবস্থানেই অনড় ট্রাম্প। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ওরা মারলে আমরা মারব না কেন? ওরা আমাদের লোকজনকে খুন করতে পারে, অঙ্গচ্ছেদ করতে পারে, বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, অথচ ওদের সাংস্কৃতিক জায়গাগুলো ছোঁয়ার অধিকার নেই আমাদের?’ ইরান কোনো পদক্ষেপ করলে আমেরিকা পাল্টা আঘাত করবে বলেও জানান ট্রাম্প।

এছাড়া ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়’ এই দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি প্রদেশের ৮০টি শহরে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ। হোয়াইট হাউসের সামনেও এমন বিক্ষোভ দেখায় সাধারণ মার্কিনিরা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

নিজ দেশেই রোষের মুখে ট্রাম্প

আপডেট সময় ০৫:৪৬:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি। তারপর থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমন হুমকি দিয়ে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও হামলা করে তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ৫২টি স্থানে হামলা করা হবে। সেগুলো মার্কিন সেনাদের টার্গেটে রয়েছে।

ইরানকে হুমকি দিয়ে এমন মন্তব্যের পরই নিজ দেশে রোষের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তার সমালোচনায় সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। তাদের দাবি, ইরানের সাংস্কৃতিক স্থানগুলিতে হামলার হুমকি দিয়ে আদতে মহিলা, শিশু নির্বিশেষে সে দেশের নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলার কথাই বলেছেন ট্রাম্প, যা যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার এমন আচরণ শোভনীয় নয়।

কাসেম সোলায়মানি হত্যা নিয়ে উত্তেজনার আবহেই সম্প্রতি ইরানকে হুমকি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘সোলায়মানি হত্যার বদলা হিসেবে কোনো মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা হলে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের আরও ৫২টি জায়গায় আক্রমণ করার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে। তার মধ্যে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে যা ইরান ও তার সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সব লক্ষ্যবস্তুতে খুব দ্রুত এবং খুব কঠোর আঘাত হানা হবে। আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র।’

কয়েক বছর আগে ইরানে মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জনকে পণবন্দি করার ঘটনা ঘটেছিল। তারই প্রতীক হিসাবে ৫২টি জায়গায় হামলার কথা ভাবা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন ট্রাম্প। তার এই মন্তব্য নিয়েই তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এভাবে প্রকাশ্যে হামলার হুমকি দেওয়ায় ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সে দেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্র্রাথী জো বাইডেন এবং ম্যাসাচুসেটস এর সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। সংবাদমধ্যমে তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টি সম্পর্কে মার্কিন নাগরিকদের না জানিয়ে, তাদের সম্মতি ছাড়া দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের। আর এই লোকটার মাথায় কী ঘুরছে, আমরা কেউই তা জানি না। এর জন্যই ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছি আমরা। ন্যাটো সহযোগী দেশগুলির থেকেও আমাদের দূরত্ব বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট নিজের মতো করে টুইটারে ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ।’

ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া থেকে নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে ইমপিচমেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ট্রাম্প। তার মধ্যেও কী করছেন দেখুন। আমাদের যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উনি। ২০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় পড়ে রয়েছি আমরা। এখন যুদ্ধ আরও বর্ধিত করার কথা বলছেন উনি। পশ্চিম এশিয়ায় না জানি কত হাজার মার্কিন নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। দেশের সমস্ত নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই প্রেসিডেন্টের কর্তব্য, দেশকে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়।’

ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করে এলিজাবেথ ওয়ারেন টুইট বার্তায় বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর হুমকি দিচ্ছেন আপনি। ইরানের সঙ্গে কিন্তু কোনো লড়াই নেই আমাদের। আমেরিকানরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চান না। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। এভাবে আপনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন না। মার্কিন বাহিনী এবং দেশের কূটনীতিবিদদের এভাবে বিপদে ফেলতে পারেন না আপনি।’

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ টুইটারে লেখেন, ‘এটা যুদ্ধাপরাধ। সাংস্কৃতিক জায়গায় হামলার হুমকি দিয়ে আসলে নিরীহ পরিবার, মহিলা ও শিশুদের মেরে ফেলার কথা বলছেন আপনি। এতে আপনার পৌরুষ প্রমাণ হয় না। এতে আপনি সুকৌশলী, তাও প্রমাণ হয় না। বরং এতে আপনার দানব রূপটাই প্রকাশ পায়।’

তবে সমালোচনার মুখে পড়েও নিজের অবস্থানেই অনড় ট্রাম্প। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ওরা মারলে আমরা মারব না কেন? ওরা আমাদের লোকজনকে খুন করতে পারে, অঙ্গচ্ছেদ করতে পারে, বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, অথচ ওদের সাংস্কৃতিক জায়গাগুলো ছোঁয়ার অধিকার নেই আমাদের?’ ইরান কোনো পদক্ষেপ করলে আমেরিকা পাল্টা আঘাত করবে বলেও জানান ট্রাম্প।

এছাড়া ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়’ এই দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি প্রদেশের ৮০টি শহরে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ। হোয়াইট হাউসের সামনেও এমন বিক্ষোভ দেখায় সাধারণ মার্কিনিরা।