কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার এবং জেলার দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপি নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমীনের ফোনালাপের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। যা ইত্তেফাক অনলাইনের হাতে এসেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা রোশন আলী মাস্টারকে বলতে শোনা যায়, ‘কি হবে এ দেশে রাজনীতি করে? টাকা দিলেই নমিনেশন পাওয়া যায়, মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, যারা নৌকা করে তারা রাজাকারের বাচ্চা। বিরোধী দল মাঠে নাই বলেই দেশ একতরফা চলছে এবং দেশের এই অধঃপতন।’
প্রায় ২ মিনিটের এ অডিও ক্লিপটি রোশন আলী মাস্টার এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীনের বলে তারা উভয়ে স্বীকার করেছেন। তবে রোশন মাস্টার বলেছেন, ‘ভাইরাল হওয়া অডিও খণ্ডিত করে প্রচার করায় এমনটি হয়েছে, পুরো অডিও প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে এতোটা সমালোচনা হতো না।’
জানা যায়, মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগ নেতা রোশন আলী মাস্টার এবং বিএনপি নেতা রুহুল আমীনের কথা হয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে তাদের এ কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি মাধ্যমে পাওয়া ফাঁস হওয়া কথোপকথনে রোশন আলী মাস্টার বিএনপির রুহুল আমীন ও বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এখনো বলি কি হবে, ….. (আপত্তিকর ভাষা, যা প্রকাশের যোগ্য নয়) এ রাজনীতি করে, যারা নৌকা করে সব রাজাকারের বাচ্চা। কি করবেন- যে দেশে টাকা দিলে নমিনেশন পাওয়া যায়, যেদেশে টাকা দিলে মন্ত্রীত্ব পাওয়া যায়, যেদেশে টাকা দিলে সব আকাম চলে।
ওই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, আপনারা বিরোধী দল (বিএনপি) শক্ত না বলে হামলা-মামলার ভয়ে আপনারা মাঠে নামেন না, আপনার (বিএনপি) নেতারা চিপায় বসে মাইক নিয়ে ফকরবাজি করে। একচেটিয়া কি একটা দেশ চলে? বিরোধী দল সব সময় স্ট্রং থাকতে হয়, আপনারা (বিএনপি) যদি সুযোগ দেন তাহলে তো অপকর্ম হবেই। যা ইচ্ছা তা-ই হবে। দেশের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী হলো আপনাদের বিরোধী দল।
এ সময় বিএনপি নেতা রুহুল আমিন বলেন, এখন বিএনপি হচ্ছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন। উত্তরে রোশন আলী মাস্টার বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) দেবিদ্বারে কই? কোনো বিএনপি নেতা মাঠে বের হতে পেরেছে? মাঠে নেমে মিছিল মিটিং করেন। আমি আপনাদেরকে সুযোগ করে দেই- অসুবিধা কি ? আমি মঞ্জু ভাইকে (বিএনপির সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি) বলেছি, দেশে যান, আন্দোলন করেন। তাহলে বুঝব আপনারা রাজনীতি করেন, আপনারা তো সময় হলে একটু ইয়ে করেন। এগুলো করলে হবে না। রাজনীতি করতে হলে নেতৃত্ব দিতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।’
রোশন আলী মাস্টারের কথোপকথনের এ অডিও ফাঁস হওয়ায় দলের উত্তর জেলার নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, ‘দলের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমন কথাবার্তা বলা তার উচিত হয়নি।’
এদিকে ফাঁস হওয়া অডিও প্রসঙ্গে রোশন আলী মাস্টার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘সম্প্রতি আমার সঙ্গে দেবিদ্বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রুহুল আমিন সাহেবের ফোনালাপ হয়। ফোনে তিনি অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে আওয়ামী লীগ কোনো স্পেইস দেয় না। আমি এর উত্তরে বলেছি, আপনারা আন্দোলন করেন না, এলাকায় না এসে শুধু অভিযোগ করেন। এটি শুধু আমার বক্তব্য না, আমার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবও অসংখ্যবার বিরোধী দলের এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাবে এ কথাই বলেছিলেন যা নির্ভেজাল সত্য। সম্প্রতি দেবিদ্বারে সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক আওয়ামী লীগে যোগদান করে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে আমি রাজাকার বলেছি, এখনো বলবো।’
ফোনালাপের অপর প্রান্তের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, রোশন ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে খোলামেলা কথা হয়েছে। এর সব কিছুই যদি ফাঁস হয়ে পড়ে তাহলে কিভাবে কথা বলবো ? আমার মাধ্যমে এ অডিও ফাঁস হয়নি, কিভাবে হয়েছে তাও জানি না। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বলেন, ‘রোশন আলী মাস্টারের ভাইরাল হওয়া অডিও শুনে আমি নিজেই বিস্মিত, হতবাক হয়েছি। একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতার মুখে এমন আপত্তিকর কথা শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। এ ধরনের কথাবার্তা বলা মোটেও ঠিক হয়নি।’