সিসিলা মাহমুদা ক্যানলি ছিলেন একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান।ছোট বেলাতেই তার মনে জন্ম নেয় খ্রিস্টধর্মের রহস্য এবং অলৌকিকতা,শাস্ত্রীয় আচারপালন এবং মতবাদ সর্ম্পকে নানা প্রশ্ন। কিন্তু এই প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর তিনি চার্চ বা যাজকদের কাছে পাননি।
এরপর হঠাৎ তিনি ইসলামের সাক্ষাৎ পান এবং তারপর একদিন মেয়েসহ ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
অনইসলাম ডটকমে ইসলাম গ্রহণ করার সে কাহিনী নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি । বাকিটা শুনুন তার মুখ থেকেই…
প্রথমত এবং সর্বাগ্রে আমি যেটি বলব তা হল আমি অনেকটা নিজের অজান্তেই মৌলিকভাবে সবসময় একজন মুসলিম ছিলাম।
আমি আমার প্রারম্ভিক জীবন থেকেই বিভিন্ন কারণে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। প্রধান কারণটি হচ্ছে- যখনই আমি কোনো খ্রিস্টান যাজককে প্রশ্ন করতাম যে, তথাকথিত পবিত্র আদেশ অথবা লাইম্যান একজন ব্যক্তির অধিকারভুক্ত কিনা? ব্যতিক্রমহীনভাবে আমি তাদের কাছে একঘেঁয়েমিপূর্ণ উত্তর পেয়েছি।
চার্চের শিক্ষা বিষয়ে কোনো কিছু আমাকে ধাঁধায় ফেললে আমি তাদের কাছে সমাধান চাইতাম কিন্তু সন্তোষজনক জবাব পেতাম না। তারা উত্তরে বলত, ‘চার্চের শিক্ষা নিয়ে তোমার কোনো প্রশ্ন করা উচিৎ নয়। তোমাকে অবশ্যই এর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’
কিন্তু সেই দিনগুলোতে আমি সাহস করে বলতে পারতাম না যে, এই উত্তরে আমি সন্তুষ্ট নই।
‘আমি যা বুঝতে পারি না সে সর্ম্পকে আমার বিশ্বাস থাকতে পারে না।’ আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যারা নিজেদেরকে খ্রিষ্টান বলে পরিচয় দেয়, তাদের অধিকাংশই এ ব্যাপারটি সর্ম্পকে পুরোপুরি অজ্ঞ।
আমি চার্চ (রোমান ক্যাথলিক) এবং তার শিক্ষণ ত্যাগ করে আমার বিশ্বাস এক ঈশ্বরের প্রতি স্থাপন করি। চার্চের তিনজন দেবতায় বিশ্বাসের তুলনায় এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অনেক সহজ।
খ্রিস্টান শিক্ষার রহস্য এবং অলৌকিকতার আর শাস্ত্রীয় আচারপালন এবং মতবাদের বিপরীতে ইসলামের মধ্যে জীবনের একটি নতুন এবং ব্যাপকতর অর্থ খুঁজে পাই আমি। যেদিকেই তাকাই আমি শুধু আল্লাহর সৃষ্টি দেখতে পাই।
আমি তার অলৌকিকতায় আশ্চর্য হই-তার সৃষ্টির সমস্ত গাছ, ফুল, পাখি ও প্রাণী দেখে। এমনকি নতুন জন্ম নেয়া একজন শিশুও সুন্দর, অলৌকিক হয়ে ওঠে। চার্চের অলৌকিকতা যা আমাকে বিশ্বাস করতে শিক্ষা দিয়েছিল তা ইসলামের অলৌকিকতা হতে বহু দুরে।
আমি স্মরণ করতে পারি আমার শিশুকালে আমি নবজাতক শিশুদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম ‘তার সবকিছুই তো কালো পাপে আচ্ছাদিত।’
ইসলাম গ্রহণ করার পর কদর্যতায় এখন আর আমার কোনো বিশ্বাস নেই। আমার কাছে সবকিছুই সুন্দর হয়ে ওঠেছে।
একদিন আমার মেয়ে ইসলাম সর্ম্পকিত একটি বই বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি পড়ে আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠি এবং এরপর ইসলামের উপর অন্যান্য আরো অনেক বই অনুসরণ করি।
শীঘ্রই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, এটি প্রকৃতপক্ষে সেটিই যা আমরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম। খ্রিস্টান থাকার সময় থেকেই আমাকে এটি বিশ্বাস করতে পরিচালিত করা হয়েছে যে, ইসলাম কেবলমাত্র তাই যা নিয়ে রসিকতা করা যায়।
তারপর থেকে যা কিছু আমি পড়েছি তা আমার নিকট ছিল আপ্তবাক্য। অচিরেই আমি কিছু মুসলিমের অনুসন্ধান করি এবং যে বিষয়গুলো আমার নিকট স্পষ্ট ছিল না সে বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করি।
এখানে পুনরায় অন্য আপ্তবাক্য ছিল। আমার প্রশ্নের সকল উত্তর ছিল দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত এবং তাদের থেকে খ্রিস্টবাদ সম্পর্কে হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হয়েছিল এটা ছিল তা থেকে একেবারেই আলাদা।
ইসলাম ধর্মের উপর ব্যাপক অধ্যয়নের পর আমি এবং আমার মেয়ে উভয়েই সিদ্ধান্ত নেই মুসলিম হওয়ার জন্য। ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর আমার নাম রেখেছি মাহমুদা ও মেয়ের নাম রেখেছি রাশিদা।
যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ইসলাম ধর্মের কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি আমাকে আকর্ষণ করেছে। আমি বলব-সেটি হল নামাজ।
খ্রিস্টানদের প্রার্থনায় সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের কাছে (যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে) প্রার্থণা করা হয় পার্থিব নেয়ামত।
অন্যদিকে ইসলামে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তার সকল নেয়ামতের জন্য নামাজের মাধ্যমে তার প্রশংসা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
আল্লাহ জানেন আমাদের কল্যাণের জন্য কি প্রয়োজন এবং আমাদের যা প্রয়োজন তা তার কাছে চাওয়া ছাড়াই তিনি আমাদের প্রদান করেন।