ঢাকা ০৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে গায়ে আগুন দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা

মো: হাবিবুর রহমানঃ

বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঁশকাইট ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি (দ্বিতীয়) বর্ষের ব্যাবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রী ও ধামঘর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের ইকবাল হোসেনের মেয়ে ইসরাত জাহান গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুল ধরিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাকে একটি প্রভাবশালী মহল প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলে মামলা হিসেবে গ্রহন না করে জিডি হিসেবে অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে মুরাদনগর থানা পুলিশের বিরোদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষুভ ও  বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ আচরনে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বাঁশকাইট কলেজের মানবিক শাখার এইচএসসি পরিক্ষার্থী ও পরমতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের প্রবাসী জসিম উদ্দিনের ছেলে জাহিদ হাসানের সাথে ইসরাত জাহানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সুবাদে দু’জনে বিভিন্ন জায়গায় অন্তরঙ্গ ছবিও তোলে। গত কয়েকদিন আগে ইসরাত জাহান তার সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার মেনে নিবে না বলে জাহিদ হাসানকে জানায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে জাহিদ হাসান জোরপূর্বক কলেজ ভবনের ছাদের উপর নিয়ে ইসরাত জাহানকে চর-থাপ্পর মারে। তখন জাহিদ হোসেন তার সাথে সম্পর্কের কথা ও এক সঙ্গে তোলা ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ইসরাত জাহানের মা সেলিনা আক্তার ওই কলেজে গিয়ে জাহিদ হাসানের সাথে দেখা করে তার মেয়ের ক্ষতি না করার জন্য আকুতি-মিনতি করে। এতেও মন গলেনি বখাটে জাহিদ হাসানের। সে ইসরাত জাহানকে দেখে নিবে এবং কোথায় কিভাবে বিয়ে দেয়, তা দেখবে বলে হুমকি দেয়। এ হুমকির ভয়ে ইসরাত জাহান গত বুধবার দুপরে নিজ ঘর ফাঁকা পেয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে। তখন তার চিৎকারে আশ পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরন করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসরাত জাহানের মৃতু হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এলাকায় এনে বখাটে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় যান ইসরাত জাহানের স্বজনরা। তখন পুলিশ মামলার পরিবর্তে জিডি করে তাড়াতাড়ি লাশ দাফন করার কথা বলে থানা থেকে বিদায় করে দেয়। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ইসরাত জাহানের সহপাঠিদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ইসরাত জাহানের স্বজনরা জানায়, উক্ত ঘটনার বিষয়টি এলাকাবাসীর নিকট বলার পরও বখাটেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মামলা করতে সাহস দিচ্ছে না। থানায় মামলা দিয়ে কি হবে, পুলিশও বখাটের পক্ষে কথা কয়।

এ দিকে রোববার ওই কলেজের আশ-পাশের অভিভাবকের সাথে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বখাটে জাহিদ হাসানের একটি গ্রুপ রয়েছে। তারা ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করে থাকে। তাদের অত্যাচারে অনেক ছাত্রী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, জিডি হয়েছে এত কোন সমস্যা নেই। যদি এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে চায় তাহলে থানায় পাঠিয়ে দেন, মামলা নেয়া হবে।

ট্যাগস

মুরাদনগরে গায়ে আগুন দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা

আপডেট সময় ০৭:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬
মো: হাবিবুর রহমানঃ

বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঁশকাইট ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি (দ্বিতীয়) বর্ষের ব্যাবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রী ও ধামঘর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের ইকবাল হোসেনের মেয়ে ইসরাত জাহান গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুল ধরিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাকে একটি প্রভাবশালী মহল প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলে মামলা হিসেবে গ্রহন না করে জিডি হিসেবে অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে মুরাদনগর থানা পুলিশের বিরোদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষুভ ও  বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ আচরনে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বাঁশকাইট কলেজের মানবিক শাখার এইচএসসি পরিক্ষার্থী ও পরমতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের প্রবাসী জসিম উদ্দিনের ছেলে জাহিদ হাসানের সাথে ইসরাত জাহানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সুবাদে দু’জনে বিভিন্ন জায়গায় অন্তরঙ্গ ছবিও তোলে। গত কয়েকদিন আগে ইসরাত জাহান তার সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার মেনে নিবে না বলে জাহিদ হাসানকে জানায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে জাহিদ হাসান জোরপূর্বক কলেজ ভবনের ছাদের উপর নিয়ে ইসরাত জাহানকে চর-থাপ্পর মারে। তখন জাহিদ হোসেন তার সাথে সম্পর্কের কথা ও এক সঙ্গে তোলা ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ইসরাত জাহানের মা সেলিনা আক্তার ওই কলেজে গিয়ে জাহিদ হাসানের সাথে দেখা করে তার মেয়ের ক্ষতি না করার জন্য আকুতি-মিনতি করে। এতেও মন গলেনি বখাটে জাহিদ হাসানের। সে ইসরাত জাহানকে দেখে নিবে এবং কোথায় কিভাবে বিয়ে দেয়, তা দেখবে বলে হুমকি দেয়। এ হুমকির ভয়ে ইসরাত জাহান গত বুধবার দুপরে নিজ ঘর ফাঁকা পেয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে। তখন তার চিৎকারে আশ পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরন করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসরাত জাহানের মৃতু হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এলাকায় এনে বখাটে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় যান ইসরাত জাহানের স্বজনরা। তখন পুলিশ মামলার পরিবর্তে জিডি করে তাড়াতাড়ি লাশ দাফন করার কথা বলে থানা থেকে বিদায় করে দেয়। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ইসরাত জাহানের সহপাঠিদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ইসরাত জাহানের স্বজনরা জানায়, উক্ত ঘটনার বিষয়টি এলাকাবাসীর নিকট বলার পরও বখাটেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মামলা করতে সাহস দিচ্ছে না। থানায় মামলা দিয়ে কি হবে, পুলিশও বখাটের পক্ষে কথা কয়।

এ দিকে রোববার ওই কলেজের আশ-পাশের অভিভাবকের সাথে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বখাটে জাহিদ হাসানের একটি গ্রুপ রয়েছে। তারা ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করে থাকে। তাদের অত্যাচারে অনেক ছাত্রী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, জিডি হয়েছে এত কোন সমস্যা নেই। যদি এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে চায় তাহলে থানায় পাঠিয়ে দেন, মামলা নেয়া হবে।