স্বাস্থ্য :
ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ। ডেঙ্গুর এমন বিস্তার এর আগে কখনো দেখা যায়নি। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনে এই জ্বরে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাংলাদেশেও বিশেষ করে ঢাকায় বেশ কয়েকজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে। যাদের মধ্যে চিকিৎসকও রয়েছেন।
ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে যতদিন কার্যকর থাকে ততদিন পর্যন্ত শরীরে নতুন প্লেটিলেট উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তের
স্বাভাবিক প্লেটিলেটের পরিমাণ হলো প্রতি মাইক্রো লিটারে ১৫০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ পর্যন্ত। ডেঙ্গু হলে এই প্লেটিলেটের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যেতে থাকে। প্লেটিলেট লেভেল ১০০,০০০ এর নিচে চলে আসলে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারেন। প্লেটিলেট লেভেল যদি ৫০০০০ এ নেমে আসে তাহলে থ্রমবোসাইটোপেনিয়া হয়ে যায়। ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই ডেঙ্গু হলে প্লেটিলেট পরীক্ষা করে দেখা হয়।
প্লেটিলেটের পরিমাণ যখন অস্বাভাবিক কমে যায় তখন রক্ত জমাট বাধতে শুরু করে এবং হ্যামোরেজিং হতে পারে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং রোগীর মৃত্যু ঘটে। পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গুর প্রতিষেধক। এটা নিয়ে অনেকে দ্বিমত পোষন করলেও ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা রিসার্চ সেন্টারের গবেষক নাম ড্যাংয়ের মতে, পেঁপে পাতার রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তা ডেঙ্গু জ্বর খুব দ্রুত সারিয়ে তোলে।
এমনকি পেঁপে পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। শ্রীলঙ্কার ফিজিশিয়ান ডাক্তার সানাথ হেট্টিগের মতে, পেঁপে গাছের কচি পাতার রস ডেঙ্গুর ওষুধ হিসেবে খুবই উপকারী। তার এই গবেষণাটি ২০০৮ সালে শ্রীলংকান জার্নাল অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস এ প্রকাশিত হয়েছিল।
যেভাবে কাজ করে: ডাক্তার সানাথ হেট্টিগের মতে, পেঁপে পাতায় কিমোপাপিন ও পাপেইন নামে দুটি এনজাইম আছে। এই উপাদান দুটি প্লেটিলেট উৎপাদন বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে। এছাড়াও ডেঙ্গুর কারণে লিভারের কোনো ক্ষতি হলে সেটাও ঠিক হতে সহায়তা করে পেঁপে পাতার রস। এছাড়া পেঁপে পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে কমপ্লেক্স ভিটামিন, যা বোন ম্যারোকে প্রচুর পরিমাণে প্লেটিলেট উৎপাদন করতে সহায়তা করে।
যেভাবে খেতে হবে: ডাক্তার সানাথ হেট্টিগের মতে, পেঁপে পাতার রস খেতে হলে মোটামুটি কচি পাতা বেছে নেয়া উচিত। এরপর এই পাতা খুব ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে অথবা বেটে রস বের করে ছেঁকে নিতে হবে। এর সঙ্গে কোনো চিনি কিংবা লবণ দেয়া যাবে না। প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে দুইবার ৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে ১০ মিলি লিটার পরিমাণ পেঁপের রস খাওয়া উচিত। ৫ থেকে ১২ বছর বয়সিদের ৫ মিলি লিটার ও ৫ বছরের ছোটদের ২.৫ মিলি লিটার পেঁপে পাতার রস খাওয়া উচিত।
কখন খেতে হবে: ডাক্তার সানাথের মতে, ডেঙ্গু জ্বর হলেই পেঁপে পাতার রস খাওয়া উচিত। রক্তের প্লেটিলেট লেভেল ১৫০,০০০ এর নিচে নামতে শুরু করলেই পেঁপে পাতার রস দুই বেলা করে খাওয়া শুরু করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শে অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাও নিতে হবে।