ঢাকা ০২:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরের দৌলতপুরে হারিয়ে যাচ্ছে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতি

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টিতে এক অনন্য অধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজলোর কবর্তীথি দৌলতপুর। এখানইে নার্গিসের ভালবাসার আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিলেন নজরুলের ‘অগ্নীবিণা’। ১৯২১ সালে বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌরতপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে আসেন কবি। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কিছু সংঘঠন বিভিন্ন সময় কিছু দাবি নিয়ে আন্দেলন করে কোন প্রকার লাভ হয়নি।

মুরাদনগর উপজেলার কো¤পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্কিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খাঁনবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না কোন সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।

জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। অযন্ত ও অবহেলার কারনে সে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে এখন তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসরখাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।

কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরি মোনালিসা খান জানান, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন সাদামাটাভাবে অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।

কবিপত্নী নার্গিসের ভাইপো বাবলু আলী খান বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে কবি নজরুলের নামে পাঠাগার ও দর্শনার্থীদের জন্য অতিথী ভবন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া স্থানিয়দের দাবি কোম্পনীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করা।

এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটির সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানান।

রাজনীতিক ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বড় ধরনের কোনো স্থাপনা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, কো¤পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করতে চাই।

মুরাদনগরের নজরুল নার্গিস শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক নুরুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হোক।

নজরুল গবেষক অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগর ভয়াবহ আগুন কয়ক কাটি টাকার ক্ষতি 

মুরাদনগরের দৌলতপুরে হারিয়ে যাচ্ছে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতি

আপডেট সময় ০২:৫১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টিতে এক অনন্য অধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজলোর কবর্তীথি দৌলতপুর। এখানইে নার্গিসের ভালবাসার আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিলেন নজরুলের ‘অগ্নীবিণা’। ১৯২১ সালে বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌরতপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে আসেন কবি। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কিছু সংঘঠন বিভিন্ন সময় কিছু দাবি নিয়ে আন্দেলন করে কোন প্রকার লাভ হয়নি।

মুরাদনগর উপজেলার কো¤পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্কিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খাঁনবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না কোন সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।

জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। অযন্ত ও অবহেলার কারনে সে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে এখন তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসরখাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।

কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরি মোনালিসা খান জানান, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন সাদামাটাভাবে অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।

কবিপত্নী নার্গিসের ভাইপো বাবলু আলী খান বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে কবি নজরুলের নামে পাঠাগার ও দর্শনার্থীদের জন্য অতিথী ভবন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া স্থানিয়দের দাবি কোম্পনীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করা।

এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটির সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানান।

রাজনীতিক ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বড় ধরনের কোনো স্থাপনা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, কো¤পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করতে চাই।

মুরাদনগরের নজরুল নার্গিস শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক নুরুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হোক।

নজরুল গবেষক অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি।