ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরের উৎপাদিত সিদল শুটকি অর্থনীতিতে নতুন বিপ্লব, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সল্পা গ্রামে বহুকাল থেকে সিদল ও শুটকি তৈরি হচ্ছে। তাদের তৈরি এ সিদল দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানী হচ্ছে। সল্পা গ্রামের কয়েকটি পরিবার তাদের বাপ-দাদার আদি এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। এক সময় ওই গ্রামের অর্ধশতাধীক পরিবার সিদল তৈরির কাজ করতো। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার কারণে আজও কিছু মানুষ শিদলকে ঘিরে নিজের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে তাদের অনেকে পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়। শুটকির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

উপজেলার সল্পা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় সিদল ও শুটকি শুকানোর কাজ করছেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদল প্রস্তুত করতে সময় পার করেন তারা।
মল সূত্রধর নামে এক শুটকি উৎপাদন কারি বলেন, দুই জাতের সিদল তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি মাছের। পোয়া মাছ চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে আসে। পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে হয়। আমাদের এলাকার প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন এ কাজ করেন। মাছের পেট কেটে নিয়ে জাল দিয়ে তেল ওঠানো হয়। ওই তেল নারীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে রাখেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। এরপর মাছগুলো মাচায় শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর এক মাস পর মটকার ভেতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেল ব্যবহার করা হয়।

ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা এ কাজ করে আসছি। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, ফলে শিদল শুঁটকি তৈরিতে খরচ কম হতো। এই কারণে শুঁটকির দাম ছিল কম। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায় না। আগে কেজিতে যে শিদল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন এই শিদল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। যার ফলে চড়া মূল্য হওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

তিনি আরো বলেন, ‘একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো শিদল।’ বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না। আমাদের সিদল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এছাড়া ভারতের আগরতলা এবং সোনামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তারা এসে সিদল নিয়ে যান। সরকারি ভাবে যদি আমারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেতাম তাহলে আমরা আরো বেশি করে বিভিন্ন দেশে শুটকি ও শিদল রপ্তানি করে দেশের জন্য বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোর নিহত

মুরাদনগরের উৎপাদিত সিদল শুটকি অর্থনীতিতে নতুন বিপ্লব, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

আপডেট সময় ০৭:১৯:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সল্পা গ্রামে বহুকাল থেকে সিদল ও শুটকি তৈরি হচ্ছে। তাদের তৈরি এ সিদল দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানী হচ্ছে। সল্পা গ্রামের কয়েকটি পরিবার তাদের বাপ-দাদার আদি এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। এক সময় ওই গ্রামের অর্ধশতাধীক পরিবার সিদল তৈরির কাজ করতো। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার কারণে আজও কিছু মানুষ শিদলকে ঘিরে নিজের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে তাদের অনেকে পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়। শুটকির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

উপজেলার সল্পা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় সিদল ও শুটকি শুকানোর কাজ করছেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদল প্রস্তুত করতে সময় পার করেন তারা।
মল সূত্রধর নামে এক শুটকি উৎপাদন কারি বলেন, দুই জাতের সিদল তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি মাছের। পোয়া মাছ চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে আসে। পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে হয়। আমাদের এলাকার প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন এ কাজ করেন। মাছের পেট কেটে নিয়ে জাল দিয়ে তেল ওঠানো হয়। ওই তেল নারীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে রাখেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। এরপর মাছগুলো মাচায় শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর এক মাস পর মটকার ভেতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেল ব্যবহার করা হয়।

ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা এ কাজ করে আসছি। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, ফলে শিদল শুঁটকি তৈরিতে খরচ কম হতো। এই কারণে শুঁটকির দাম ছিল কম। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায় না। আগে কেজিতে যে শিদল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন এই শিদল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। যার ফলে চড়া মূল্য হওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

তিনি আরো বলেন, ‘একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো শিদল।’ বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না। আমাদের সিদল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এছাড়া ভারতের আগরতলা এবং সোনামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তারা এসে সিদল নিয়ে যান। সরকারি ভাবে যদি আমারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেতাম তাহলে আমরা আরো বেশি করে বিভিন্ন দেশে শুটকি ও শিদল রপ্তানি করে দেশের জন্য বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম।