ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাওয়াইয়া শিল্পী ও সাংবাদিক শফিউল আলম রাজার মৃত্যু

বিনোদন ডেস্কঃ

ভাওয়াইয়া শিল্পী এবং সাংবাদিক শফিউল আলম রাজা আর নেই (ইন্নানিল্লাহ ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার দুপুরে রাজধানীর পল্লবী এলাকার নিজের ভাড়া বাসার দরজা ভেঙে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে সময় তার মরদেহ বিছানায় শোয়া অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারণা, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।​

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া শফিউল আলম রাজা শ্রোতা-দর্শকের কাছে ‘ভাওয়াইয়া রাজা’, ‘ভাওয়াইয়া রাজকুমার’ ও ‘ভাওয়াইয়ার ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ভাওয়াইয়া গানের এই শিল্পী কৈশরে পিতা মরহুম নাজমুল হক ও মাতা মরহুমা শামসুন্নাহার বেগমের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় তার গান শেখা শুরু। সংগীতে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তবে ভাওয়াইয়ার কিংবদন্তি-গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী নুরুল ইসলাম জাহিদের কাছে সংগীতের তাত্ত্বিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন রাজা। সফিউল আলম রাজা বাংলাদেশ বেতারের ‘বিশেষ’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘প্রথম’ শ্রেণীর শিল্পী ছিলেন। এছাড়াও তিনি দেশের সব ক’টি চ্যানেলে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করতেন। সংগীত পরিবেশন করেছেন বিদেশী বিভিন্ন মঞ্চ এবং মিডিয়াতেও (এরমধ্যে কলকাতার তারা মিউজিক এবং কলকাতা টিভি উল্লেখযোগ্য)। লোক সঙ্গীতের অন্যতম ধারা ভাওয়াইয়া গানের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে শিল্পী রাজা ২০০৮ সালে রাজধানীতে ‘ভাওয়াইয়া’ গানের দল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও ২০১১ সালে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাওয়াইয়া স্কুল’। যে স্কুলে ভাওয়াইয়ার ওপর এক বছরের ফ্রি সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়।

২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সংস্কৃতির সকল শাখা নিয়ে রাজধানীর পল্লবীতে ‘কলতান সাংস্কৃতিক একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন এই শিল্পী। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘উত্তরের সুর’-এ চারটি মৌলিক ভাওয়াইয়া গান গেয়েছেন। শিল্পী জীবনে স্বীকৃতি স্বরূপ সফিউল আলম রাজা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল বিকাশ প্রতিভা অন্বেষণে লোকসঙ্গীত বিভাগে (ভাওয়াইয়া নিয়ে) ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজধানীতে এ পর্যন্ত রাজা’র ৬ টি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে ২টি, আঁড়িয়াল সেন্টারের উদ্যোগে একটি, আঁলিয়স ফ্রঁসেজের উদ্যোগে একটি, গুরুর চিকিৎসা সহায়তায় ‘ভাওয়াইয়া’ গানের দল-এর আয়োজনে একটি এবং ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে একটি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে রাজার একটি মিক্সড অ্যালবাম এবং ভায়োলিন মিডিয়া থেকে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে একক ভাওয়াইয়া অ্যালবাম ‘কবর দেখিয়া যান’। সংগীত নিয়ে সফর করেছেন অষ্ট্রেলিয়া, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে। তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে ‘বিচারক’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিল্পী সফিউল আলম রাজা পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে দৈনিক যুগান্তরে সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে ১৪ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রিয়.কম-এর চিফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।

পেশাগত জীবনেও তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সাংবাদিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, ডেমোক্রিসি ওয়াচ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো ক্লাব এসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

ভাওয়াইয়া শিল্পী ও সাংবাদিক শফিউল আলম রাজার মৃত্যু

আপডেট সময় ১২:১১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০১৯
বিনোদন ডেস্কঃ

ভাওয়াইয়া শিল্পী এবং সাংবাদিক শফিউল আলম রাজা আর নেই (ইন্নানিল্লাহ ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার দুপুরে রাজধানীর পল্লবী এলাকার নিজের ভাড়া বাসার দরজা ভেঙে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে সময় তার মরদেহ বিছানায় শোয়া অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারণা, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।​

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া শফিউল আলম রাজা শ্রোতা-দর্শকের কাছে ‘ভাওয়াইয়া রাজা’, ‘ভাওয়াইয়া রাজকুমার’ ও ‘ভাওয়াইয়ার ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ভাওয়াইয়া গানের এই শিল্পী কৈশরে পিতা মরহুম নাজমুল হক ও মাতা মরহুমা শামসুন্নাহার বেগমের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় তার গান শেখা শুরু। সংগীতে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তবে ভাওয়াইয়ার কিংবদন্তি-গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী নুরুল ইসলাম জাহিদের কাছে সংগীতের তাত্ত্বিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন রাজা। সফিউল আলম রাজা বাংলাদেশ বেতারের ‘বিশেষ’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘প্রথম’ শ্রেণীর শিল্পী ছিলেন। এছাড়াও তিনি দেশের সব ক’টি চ্যানেলে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করতেন। সংগীত পরিবেশন করেছেন বিদেশী বিভিন্ন মঞ্চ এবং মিডিয়াতেও (এরমধ্যে কলকাতার তারা মিউজিক এবং কলকাতা টিভি উল্লেখযোগ্য)। লোক সঙ্গীতের অন্যতম ধারা ভাওয়াইয়া গানের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে শিল্পী রাজা ২০০৮ সালে রাজধানীতে ‘ভাওয়াইয়া’ গানের দল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও ২০১১ সালে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাওয়াইয়া স্কুল’। যে স্কুলে ভাওয়াইয়ার ওপর এক বছরের ফ্রি সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়।

২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সংস্কৃতির সকল শাখা নিয়ে রাজধানীর পল্লবীতে ‘কলতান সাংস্কৃতিক একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন এই শিল্পী। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘উত্তরের সুর’-এ চারটি মৌলিক ভাওয়াইয়া গান গেয়েছেন। শিল্পী জীবনে স্বীকৃতি স্বরূপ সফিউল আলম রাজা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল বিকাশ প্রতিভা অন্বেষণে লোকসঙ্গীত বিভাগে (ভাওয়াইয়া নিয়ে) ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজধানীতে এ পর্যন্ত রাজা’র ৬ টি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে ২টি, আঁড়িয়াল সেন্টারের উদ্যোগে একটি, আঁলিয়স ফ্রঁসেজের উদ্যোগে একটি, গুরুর চিকিৎসা সহায়তায় ‘ভাওয়াইয়া’ গানের দল-এর আয়োজনে একটি এবং ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে একটি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে রাজার একটি মিক্সড অ্যালবাম এবং ভায়োলিন মিডিয়া থেকে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে একক ভাওয়াইয়া অ্যালবাম ‘কবর দেখিয়া যান’। সংগীত নিয়ে সফর করেছেন অষ্ট্রেলিয়া, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে। তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে ‘বিচারক’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিল্পী সফিউল আলম রাজা পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে দৈনিক যুগান্তরে সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে ১৪ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রিয়.কম-এর চিফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।

পেশাগত জীবনেও তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সাংবাদিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, ডেমোক্রিসি ওয়াচ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো ক্লাব এসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।