ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম্পিউটার নিয়ে ব্যবহারকারীদের যত ভুল ধারণা

তথপ্রযোক্তি ডেস্কঃ
আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য যতগুলো প্রযুক্তি পণ্য রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো—কম্পিউটার। আমরা হয়তো বুঝেও না বুঝে এটি ব্যবহার করে থাকি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন কম্পিউটারও কিনে থাকি কতিপয় ভুল ধারণাকে কেন্দ্র করে। হয়তো বছরের পর বছর আমরা এই ভুল ধারণাকে লালন করে চলেছি। এ লেখাটিতে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মনে বসত করা কয়েকটি ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হলো। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিরকম সেই ভুল ধারণাগুলো—

কম্পিউটার রিস্টার্ট

প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে অবশ্যই আপনাকে কম্পিউটার রিস্টার্ট করতে হবে। রিস্টার্ট না করলে কি হবে? ব্যস্তবিকভাবে, প্রায় বলতে গেলে ৯০ শতাংশ সময়ে প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে প্রোগ্রাম থেকে পিসি রিস্টার্ট করতে বললেও তা করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু ব্যাপারে সত্যিই রিস্টার্ট করার প্রয়োজন পড়ে—অনেক সময় সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে নতুন সফটওয়্যারটির কিছু ফাইল মডিফাই করার প্রয়োজন পড়ে যা অন্য প্রোগ্রাম আগে থেকেই ব্যবহার করে লক করে রেখেছে, সেটিতে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য পিসি রিস্টার্ট করার প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে ৫ শতাংশ বার এইরকম প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই নতুন যে কোনো প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে আরামে পিসি ব্যবহার করতেই থাকুন, রিস্টার্ট করতে বললে এড়িয়ে যান, বিশ্বাস করুন কিছুই হবে না এবং আপনার কম্পিউটার আগের মতোই চলবে।

উইন্ডোজ নিরাপদ নয়

আপনি ইন্টারনেটে নিয়মিত হলে, অবশ্যই এই বাক্যটি শুনে থাকবেন, ‘উইন্ডোজ ব্যবহার করায় নিরাপত্তা নেই’। ইউটিউবে তো হাজারো ইউটিউবার এই নিয়ে বড় বড় ভিডিও বানিয়ে ফেলেছেন। আবার ব্লগাররাও বহু লিখেছেন এই ব্যাপারটি নিয়ে। তাঁদের সবার কাছে প্রায় একটাই যুক্তি আর তা হলো- উইন্ডোজ সবচাইতে বেশি ব্যবহারকারী ব্যবহার করে, তাই অ্যাটাকার এবং ভাইরাস মেকাররা সর্বদা উইন্ডোজকে টার্গেট করে ভাইরাস তৈরি করে, তাই উইন্ডোজ ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার সুযোগ থাকে। হ্যাঁ, এই কথাটি সত্য যে, বেশিরভাগ হ্যাকার উইন্ডোজকে টার্গেট করেই ভাইরাস তৈরি করে, যাতে একসঙ্গে সেটিকে অনেক বিস্তার লাভ করাতে পারে। যাই হোক, যদি আপনি উইন্ডোজকে নিয়মিত আপডেট রাখেন, আপনার ডাটাগুলোর ব্যাকআপ রাখেন, তবে আপনি সত্যিই অনেক নিরাপদে থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন, বেশিরভাগ হ্যাক বা অ্যাটাক হয়ে থাকে শুধু আপনার অসাবধানতার কারণে, এ জন্য উইন্ডোজ দায়ী নয়।

সেফলি ইজেক্ট পেনড্রাইভ

পেনড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ, ফ্ল্যাশ কার্ড কম্পিউটার থেকে বেড় করার আগে সেফলি ইজেক্ট রিমুভেবল ডিস্ক বা ইজেক্ট স্টোরেজ মিডিয়া না ক্লিক করলে আপনার পেনড্রাইভ, হার্ডড্রাইভ, ফ্ল্যাশ স্টোরেজ মিডিয়া করাপ্টেড হয়ে যাবে। আসলে এমন তথ্যটি ভুল। তবে স্টোরেজ মিডিয়াতে কোনো ফাইল কপি করতে বা কপি সম্পূর্ণ হয়নি এই অবস্থায় সেটি আনপ্লাগ করলে মিডিয়া স্টোরেজটি বা হতে পারে কপি করা ফাইলটি করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। তবে আপনি জানেন যে, এতে কোনো ফাইল কপি হচ্ছে না, বা কপি করা শেষ, এই অবস্থায় জাস্ট টেনে খুলে ফেলুন এতে কোনো সমস্যাই হবে না। এত চিন্তা করার কিছু নেই। ৯৯ শতাংশ সময়ে দ্রুত খুলে ফেললেও সমস্যা হবে না।

ড্রাইভার ডিস্ক

হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো কেন এখনো ড্রাইভার ডিস্ক তৈরি করে পণ্যের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। সিডির যুগ কি এখনো আছে? যাই হোক, ড্রাইভার ডিস্ক জমা করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ডিভাইসটি ১ বছর বা এর বেশি পুরাতন হয়ে থাকে তবে এই ড্রাইভার ডিস্কগুলো এমনিতেই বেকার হয়ে যাবে। কারণ, সকল ড্রাইভারের আপডেট চলে আসবে, আর ব্যাকডেট ড্রাইভার ব্যবহার করা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি আপনার ডিভাইসটির বা গ্যাজেটটির প্রস্তুতকারী কোম্পানির ওয়েবসাইটে যান এবং আপডেট ড্রাইভার ডাউনলোড করে ইন্সটল করেন।

এন্টিভাইরাস আছে না!

অনেকে মনে করেন, আমার সিস্টেমে কেয়ামত পর্যন্ত ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না, আমি যে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি তাতে ভাইরাস আক্রমণ সম্ভব না। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কখনোই বুলেট প্রুফ নয় এবং আপনাকে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে, আপনার সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে না। নতুন ভাইরাস বা মডিফাই করা পুরাতন ভাইরাসকেও আপনার দামি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ডিটেক্ট করতে পারবে না—কারণ, এটি আপনার এন্টিভাইরাসের ভাইরাস ডাটাবেজে সংরক্ষিত নেই। এন্টিভাইরাস শুধু সেগুলোকেই ভাইরাস হিসেবে ডিটেক্ট করে, যেগুলো আগে থেকে তাদের ডাটাবেজে থাকে। বর্তমানের এন্টিভাইরাসগুলো কোনো প্রোগ্রামের আচরণের ওপর নজর রাখতে পারে, সেগুলো ডাটা চুরি করছে কি না বা সিস্টেমকে অকেজো করার চেষ্টা করছে কি না। এন্টিভাইরাসগুলো যেভাবে উন্নতি লাভ করছে, ভাইরাসগুলো তার দ্বিগুণ গতিতে আরো স্মার্ট হয়ে উঠছে। সুতরাং আপনি কোনো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার মানে কিন্তু এই নয় যে, আপনি পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ। আপনাকে অবশ্যই বেস্ট সিকিউরিটি প্র্যাকটিস করতে হবে।

ইন্টারনেটে দ্রুত গতির ওয়েবসাইট

অনেকেই মনে করেন ফাস্ট ইন্টারনেট স্পিড কিনলেই যে কোনো ওয়েবসাইট অনেক ফাস্ট লোড হবে এবং যে কোনো ফাইল অনেক দ্রুত ডাউনলোড হবে। এমন ধারণা আসলেই ভুল। তবে আপনার যদি ১০-২০ এমবিপিএস কানেকশন থাকে তবে সত্যিই আপনার কানেকশনে অন্যদের চাইতে দ্রুত পেজ লোড হবে এবং আপনি ভালো ডাউনলোড স্পিড পাবেন, কিন্তু আপনার যদি ৫০ এমবিপিএস লাইন থাকে তবে আপনি কোনো পার্থক্য বুঝতে পারবেন না। বেশিরভাগ সময়ে ওয়েবসাইটগুলো খুব ভালো সার্ভার ব্যবহার করে না।

এগুলো লাখো ব্যবহারকারীর সাপোর্ট দেওয়ার জন্য হয়ে থাকে না। তবে আপনি যদি গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, অ্যামাজন ক্লাউড ইত্যাদি থেকে কিছু ডাউনলোড করেন তবে নিশ্চয় অনেক ফাস্ট স্পিড পাবেন। হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্পিড। অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলোর সার্ভার ব্যান্ডউইথ স্পিড লিমিট করে রাখে, যাতে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারীর সার্ভিস দিতে পারে। সবাইকে হাই-স্পিড দেওয়ার জন্য অনেক শক্তিশালী সার্ভারের প্রয়োজন যা অনেক ব্যয়বহুল। তাই অনেক সময় ১০ এমবিপিএস কানেকশন থেকে কিছু ডাউনলোড লাগানোর পরেও ৫০০ কিলোবাইট প্রতি সেকেন্ড ডাউনলোড হতে দেখা যায়, এটা আপনার কানেকশনের সমস্যা নয়। সার্ভার আপনাকে স্পিড সাপোর্ট দিতে পারছে না। এছাড়াও এত ফাস্ট ইন্টারনেটের প্রয়োজনও নেই আপনার, যদি আপনারা এক কানেকশন ভাগ করে অনেক মানুষ একত্রে ব্যবহার করেন তবে প্রয়োজনীয় হতে পারে।

বেশি র্যামে ফাস্ট পিসি

যত বেশি র্যাম হবে ততই ভালো। হ্যাঁ, এই কথাটি সত্য। তবে সবসময়ই বেশি থাকা মানেই কিন্তু বেশি উপকারী হয় না। আপনি যদি একজন মধ্যম কম্পিউটিং করা মানুষ হয়ে থাকেন তবে ৮ জিবি র্যাম আপনার সকল কাজের জন্য যথেষ্ট হবে। এখন আপনি যদি র?্যাম হাংরি অ্যাপ্লিকেশন যেমন: অ্যাডোবি ফটোশপ, অ্যাডোবি প্রিমিয়ার বা ভার্চুয়াল মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই বেশি র?্যাম থাকা আপনার জন্য আদর্শ। কিন্তু আপনার সিস্টেমে এবং আপনার কাজ অনুসারে যদি বেশি র?্যামের প্রয়োজনীয়তা না থাকে এবং আপনি ভেবে রেখেছেন বেশি র?্যাম মানেই বেশি ফাস্ট পিসি তবে এটি আপনার কোনো কাজেই আসবে না। আরেকটি কথা মাথায় রাখা প্রয়োজনীয় যে, র?্যাম স্পিড বা ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে র্যাম লেটেন্সি

বারবার রিফ্রেশ দেওয়া

কম্পিউটার অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু বার রিফ্রেস, কাজ করতে করতে আবার রিফ্রেস, কম্পিউটার অফ করতেও রিফ্রেস। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এই রিফ্রেস করে কি হয়? এতে কোনো অবস্থাতেই পিসি ফাস্ট হয় না, বরং আপনার পিসি স্লো হয়ে যেতে পারে। আপনি জানেন কি, প্রত্যেকবার রিফ্রেস করার সময় আপনার উইন্ডোতে থাকা সকল আইকন এবং ফাইলগুলো রিলোড হয়। এতে কম্পিউটিং পাওয়ার ক্ষয় হয়। মনে করুন আপনার পিসির একটি ফোল্ডারে ৫০০টি ভিডিও ফাইল রয়েছে, এখন আপনি যখন ফোল্ডারটি ওপেন করবেন তখন ভিডিও ফাইলগুলোর থ্যাম্বনেইল লোড হতে ফোল্ডারটি রেডি হতে একটু সময় লাগবে, এখন আপনি যদি সেখানে রিফ্রেস করে দেন, তো ফাইলগুলোর থ্যাম্বনেইল আবার রিলোড হবে, ফলে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার স্লো হয়ে পড়বে। এটা করে কোনোই উপকারিতা পাবেন না, তাই রিফ্রেস, রিফ্রেস, রিফ্রেস করা থেকে নিজের হাতকে এবং মাউসকে রক্ষা দিন, আশা করি এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসবেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

কম্পিউটার নিয়ে ব্যবহারকারীদের যত ভুল ধারণা

আপডেট সময় ০৪:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০১৯
তথপ্রযোক্তি ডেস্কঃ
আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য যতগুলো প্রযুক্তি পণ্য রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো—কম্পিউটার। আমরা হয়তো বুঝেও না বুঝে এটি ব্যবহার করে থাকি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন কম্পিউটারও কিনে থাকি কতিপয় ভুল ধারণাকে কেন্দ্র করে। হয়তো বছরের পর বছর আমরা এই ভুল ধারণাকে লালন করে চলেছি। এ লেখাটিতে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মনে বসত করা কয়েকটি ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হলো। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিরকম সেই ভুল ধারণাগুলো—

কম্পিউটার রিস্টার্ট

প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে অবশ্যই আপনাকে কম্পিউটার রিস্টার্ট করতে হবে। রিস্টার্ট না করলে কি হবে? ব্যস্তবিকভাবে, প্রায় বলতে গেলে ৯০ শতাংশ সময়ে প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে প্রোগ্রাম থেকে পিসি রিস্টার্ট করতে বললেও তা করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু ব্যাপারে সত্যিই রিস্টার্ট করার প্রয়োজন পড়ে—অনেক সময় সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে নতুন সফটওয়্যারটির কিছু ফাইল মডিফাই করার প্রয়োজন পড়ে যা অন্য প্রোগ্রাম আগে থেকেই ব্যবহার করে লক করে রেখেছে, সেটিতে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য পিসি রিস্টার্ট করার প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে ৫ শতাংশ বার এইরকম প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই নতুন যে কোনো প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পরে আরামে পিসি ব্যবহার করতেই থাকুন, রিস্টার্ট করতে বললে এড়িয়ে যান, বিশ্বাস করুন কিছুই হবে না এবং আপনার কম্পিউটার আগের মতোই চলবে।

উইন্ডোজ নিরাপদ নয়

আপনি ইন্টারনেটে নিয়মিত হলে, অবশ্যই এই বাক্যটি শুনে থাকবেন, ‘উইন্ডোজ ব্যবহার করায় নিরাপত্তা নেই’। ইউটিউবে তো হাজারো ইউটিউবার এই নিয়ে বড় বড় ভিডিও বানিয়ে ফেলেছেন। আবার ব্লগাররাও বহু লিখেছেন এই ব্যাপারটি নিয়ে। তাঁদের সবার কাছে প্রায় একটাই যুক্তি আর তা হলো- উইন্ডোজ সবচাইতে বেশি ব্যবহারকারী ব্যবহার করে, তাই অ্যাটাকার এবং ভাইরাস মেকাররা সর্বদা উইন্ডোজকে টার্গেট করে ভাইরাস তৈরি করে, তাই উইন্ডোজ ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার সুযোগ থাকে। হ্যাঁ, এই কথাটি সত্য যে, বেশিরভাগ হ্যাকার উইন্ডোজকে টার্গেট করেই ভাইরাস তৈরি করে, যাতে একসঙ্গে সেটিকে অনেক বিস্তার লাভ করাতে পারে। যাই হোক, যদি আপনি উইন্ডোজকে নিয়মিত আপডেট রাখেন, আপনার ডাটাগুলোর ব্যাকআপ রাখেন, তবে আপনি সত্যিই অনেক নিরাপদে থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন, বেশিরভাগ হ্যাক বা অ্যাটাক হয়ে থাকে শুধু আপনার অসাবধানতার কারণে, এ জন্য উইন্ডোজ দায়ী নয়।

সেফলি ইজেক্ট পেনড্রাইভ

পেনড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ, ফ্ল্যাশ কার্ড কম্পিউটার থেকে বেড় করার আগে সেফলি ইজেক্ট রিমুভেবল ডিস্ক বা ইজেক্ট স্টোরেজ মিডিয়া না ক্লিক করলে আপনার পেনড্রাইভ, হার্ডড্রাইভ, ফ্ল্যাশ স্টোরেজ মিডিয়া করাপ্টেড হয়ে যাবে। আসলে এমন তথ্যটি ভুল। তবে স্টোরেজ মিডিয়াতে কোনো ফাইল কপি করতে বা কপি সম্পূর্ণ হয়নি এই অবস্থায় সেটি আনপ্লাগ করলে মিডিয়া স্টোরেজটি বা হতে পারে কপি করা ফাইলটি করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। তবে আপনি জানেন যে, এতে কোনো ফাইল কপি হচ্ছে না, বা কপি করা শেষ, এই অবস্থায় জাস্ট টেনে খুলে ফেলুন এতে কোনো সমস্যাই হবে না। এত চিন্তা করার কিছু নেই। ৯৯ শতাংশ সময়ে দ্রুত খুলে ফেললেও সমস্যা হবে না।

ড্রাইভার ডিস্ক

হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো কেন এখনো ড্রাইভার ডিস্ক তৈরি করে পণ্যের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। সিডির যুগ কি এখনো আছে? যাই হোক, ড্রাইভার ডিস্ক জমা করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ডিভাইসটি ১ বছর বা এর বেশি পুরাতন হয়ে থাকে তবে এই ড্রাইভার ডিস্কগুলো এমনিতেই বেকার হয়ে যাবে। কারণ, সকল ড্রাইভারের আপডেট চলে আসবে, আর ব্যাকডেট ড্রাইভার ব্যবহার করা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি আপনার ডিভাইসটির বা গ্যাজেটটির প্রস্তুতকারী কোম্পানির ওয়েবসাইটে যান এবং আপডেট ড্রাইভার ডাউনলোড করে ইন্সটল করেন।

এন্টিভাইরাস আছে না!

অনেকে মনে করেন, আমার সিস্টেমে কেয়ামত পর্যন্ত ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না, আমি যে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি তাতে ভাইরাস আক্রমণ সম্ভব না। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কখনোই বুলেট প্রুফ নয় এবং আপনাকে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে, আপনার সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে না। নতুন ভাইরাস বা মডিফাই করা পুরাতন ভাইরাসকেও আপনার দামি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ডিটেক্ট করতে পারবে না—কারণ, এটি আপনার এন্টিভাইরাসের ভাইরাস ডাটাবেজে সংরক্ষিত নেই। এন্টিভাইরাস শুধু সেগুলোকেই ভাইরাস হিসেবে ডিটেক্ট করে, যেগুলো আগে থেকে তাদের ডাটাবেজে থাকে। বর্তমানের এন্টিভাইরাসগুলো কোনো প্রোগ্রামের আচরণের ওপর নজর রাখতে পারে, সেগুলো ডাটা চুরি করছে কি না বা সিস্টেমকে অকেজো করার চেষ্টা করছে কি না। এন্টিভাইরাসগুলো যেভাবে উন্নতি লাভ করছে, ভাইরাসগুলো তার দ্বিগুণ গতিতে আরো স্মার্ট হয়ে উঠছে। সুতরাং আপনি কোনো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার মানে কিন্তু এই নয় যে, আপনি পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ। আপনাকে অবশ্যই বেস্ট সিকিউরিটি প্র্যাকটিস করতে হবে।

ইন্টারনেটে দ্রুত গতির ওয়েবসাইট

অনেকেই মনে করেন ফাস্ট ইন্টারনেট স্পিড কিনলেই যে কোনো ওয়েবসাইট অনেক ফাস্ট লোড হবে এবং যে কোনো ফাইল অনেক দ্রুত ডাউনলোড হবে। এমন ধারণা আসলেই ভুল। তবে আপনার যদি ১০-২০ এমবিপিএস কানেকশন থাকে তবে সত্যিই আপনার কানেকশনে অন্যদের চাইতে দ্রুত পেজ লোড হবে এবং আপনি ভালো ডাউনলোড স্পিড পাবেন, কিন্তু আপনার যদি ৫০ এমবিপিএস লাইন থাকে তবে আপনি কোনো পার্থক্য বুঝতে পারবেন না। বেশিরভাগ সময়ে ওয়েবসাইটগুলো খুব ভালো সার্ভার ব্যবহার করে না।

এগুলো লাখো ব্যবহারকারীর সাপোর্ট দেওয়ার জন্য হয়ে থাকে না। তবে আপনি যদি গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, অ্যামাজন ক্লাউড ইত্যাদি থেকে কিছু ডাউনলোড করেন তবে নিশ্চয় অনেক ফাস্ট স্পিড পাবেন। হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্পিড। অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলোর সার্ভার ব্যান্ডউইথ স্পিড লিমিট করে রাখে, যাতে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারীর সার্ভিস দিতে পারে। সবাইকে হাই-স্পিড দেওয়ার জন্য অনেক শক্তিশালী সার্ভারের প্রয়োজন যা অনেক ব্যয়বহুল। তাই অনেক সময় ১০ এমবিপিএস কানেকশন থেকে কিছু ডাউনলোড লাগানোর পরেও ৫০০ কিলোবাইট প্রতি সেকেন্ড ডাউনলোড হতে দেখা যায়, এটা আপনার কানেকশনের সমস্যা নয়। সার্ভার আপনাকে স্পিড সাপোর্ট দিতে পারছে না। এছাড়াও এত ফাস্ট ইন্টারনেটের প্রয়োজনও নেই আপনার, যদি আপনারা এক কানেকশন ভাগ করে অনেক মানুষ একত্রে ব্যবহার করেন তবে প্রয়োজনীয় হতে পারে।

বেশি র্যামে ফাস্ট পিসি

যত বেশি র্যাম হবে ততই ভালো। হ্যাঁ, এই কথাটি সত্য। তবে সবসময়ই বেশি থাকা মানেই কিন্তু বেশি উপকারী হয় না। আপনি যদি একজন মধ্যম কম্পিউটিং করা মানুষ হয়ে থাকেন তবে ৮ জিবি র্যাম আপনার সকল কাজের জন্য যথেষ্ট হবে। এখন আপনি যদি র?্যাম হাংরি অ্যাপ্লিকেশন যেমন: অ্যাডোবি ফটোশপ, অ্যাডোবি প্রিমিয়ার বা ভার্চুয়াল মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই বেশি র?্যাম থাকা আপনার জন্য আদর্শ। কিন্তু আপনার সিস্টেমে এবং আপনার কাজ অনুসারে যদি বেশি র?্যামের প্রয়োজনীয়তা না থাকে এবং আপনি ভেবে রেখেছেন বেশি র?্যাম মানেই বেশি ফাস্ট পিসি তবে এটি আপনার কোনো কাজেই আসবে না। আরেকটি কথা মাথায় রাখা প্রয়োজনীয় যে, র?্যাম স্পিড বা ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে র্যাম লেটেন্সি

বারবার রিফ্রেশ দেওয়া

কম্পিউটার অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু বার রিফ্রেস, কাজ করতে করতে আবার রিফ্রেস, কম্পিউটার অফ করতেও রিফ্রেস। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এই রিফ্রেস করে কি হয়? এতে কোনো অবস্থাতেই পিসি ফাস্ট হয় না, বরং আপনার পিসি স্লো হয়ে যেতে পারে। আপনি জানেন কি, প্রত্যেকবার রিফ্রেস করার সময় আপনার উইন্ডোতে থাকা সকল আইকন এবং ফাইলগুলো রিলোড হয়। এতে কম্পিউটিং পাওয়ার ক্ষয় হয়। মনে করুন আপনার পিসির একটি ফোল্ডারে ৫০০টি ভিডিও ফাইল রয়েছে, এখন আপনি যখন ফোল্ডারটি ওপেন করবেন তখন ভিডিও ফাইলগুলোর থ্যাম্বনেইল লোড হতে ফোল্ডারটি রেডি হতে একটু সময় লাগবে, এখন আপনি যদি সেখানে রিফ্রেস করে দেন, তো ফাইলগুলোর থ্যাম্বনেইল আবার রিলোড হবে, ফলে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার স্লো হয়ে পড়বে। এটা করে কোনোই উপকারিতা পাবেন না, তাই রিফ্রেস, রিফ্রেস, রিফ্রেস করা থেকে নিজের হাতকে এবং মাউসকে রক্ষা দিন, আশা করি এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসবেন।